বাজারে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় নতুন করে নাম লিখিয়েছে সয়াবিন তেল ও চিনি। ডলার কিনতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে কারণ দেখিয়ে ভোজ্যতেল ও চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেল ও চিনির দাম বাড়িয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই দুই পণ্যের দাম এমন সময় বাড়ল, যখন পেঁয়াজের দাম হঠাৎ নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। শনিবার পেঁয়াজের দাম রাতারাতি কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা বাড়ার পর তা আর কমেনি।
গতকাল সোমবার পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা বাজার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বাজারে দেশি পেঁয়াজ এখনো প্রতি কেজি ২০০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দামও কমবেশি ১৮০ টাকা। দেশি মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও তা দামে বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এরই মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে অন্তত ৪ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম কেজিতে ১৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। কোম্পানিগুলো নতুন দামের এই পণ্য বাজারে ছেড়েছে।
বিক্রেতারা জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্যতেল ও চিনির পাইকারি ব্যবসায়ী ও ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোম্পানিগুলো গত দুই সপ্তাহ আগে থেকে তেল ও চিনির পাইকারি দাম অল্প করে বাড়তে শুরু করে। তবে মোড়কে নতুন দাম উল্লেখ করে পণ্য বাজারে পাঠানো শুরু করে তিন-চার দিন আগে। তাতে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮২৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৪৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৪৭–১৪৮ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ১৫২–১৫৩ টাকায়। খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির নির্ধারিত দাম ছিল যথাক্রমে ১৩০–১৩৫ টাকা কেজি। প্যাকেটজাত চিনির নতুন দাম এখন ১৪৮ টাকা। আর প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজারদর অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে বাজারে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১ শতাংশের মতো বেড়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়ে ১৬৯ টাকায় নির্ধারণ করেছিল কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়েছিল তারা। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ভোজ্যতেল ও চিনির নতুন দাম নির্ধারণের জন্য গত নভেম্বরের মাঝামাঝি ব্যবসায়ীরা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিল। আলোচনায় কোম্পানিগুলো ডলারের দর ১২৫ টাকা ধরতে প্রস্তাব দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে ডলারের বিনিময় হার ১১২ টাকা ধরার কথা বলা হয়। আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও কোম্পানিগুলো নিজেদের ঠিক করা দামে বাজারে পণ্য ছেড়েছে।
এ ব্যাপারে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি জানতে পেরেছি। তেল ও চিনির দাম নিয়ে পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসা হবে।’ অন্যদিকে পেঁয়াজের ব্যাপারে বাণিজ্যসচিব জানান, আগে খোলা ঋণপত্রের আওতায় ভারত থেকে ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ দেশে আসবে। এর মধ্যে গতকাল ৩৫০ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে। এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে আরও প্রায় ৪ হাজার টন পেঁয়াজ আনা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। পেঁয়াজ বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগে গতকাল ১২২টি প্রতিষ্ঠানকে ৮ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ নিয়ে গত তিন দিনে সারা দেশে মোট ৩৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পেঁয়াজ আমদানিতে শীর্ষে বাংলাদেশ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৭ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করে। ওই বছর আর কোনো দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেনি। জাতিসংঘের পণ্যবাণিজ্য পরিসংখ্যানের তথ্যভান্ডার (ইউএন কমট্রেড) অনুযায়ী, ২০২২ সালে দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার টন। মালয়েশিয়ার পেঁয়াজ আমদানি ছিল সোয়া পাঁচ লাখ টন।
এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের ১১ মাসে পেঁয়াজের আমদানি ৮ লাখ ৬৪ হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষেও বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানির শীর্ষে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।