লোকসভা নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত ভারতের পাঁচ রাজ্যের ভোটে কংগ্রেস ও বিজেপি দুটি করে রাজ্যে এগিয়ে রয়েছে। আজ রোববার সকালে চার রাজ্যের ভোট গণনা শুরু হয়েছে।
প্রাথমিক গণনায় দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এগিয়ে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে, কংগ্রেস এগিয়ে ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানায়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামে ভোট গণনা হবে আগামীকাল সোমবার।
আজ সকাল সাতটা থেকে চার রাজ্যের ভোট গণনা শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গণনায় দেখা যাচ্ছে, ৩০ বছরের রীতি অনুযায়ী রাজস্থানে শাসকের বদল ঘটছে। কংগ্রেসের হাত থেকে মরুরাজ্য ছিনিয়ে নিতে চলেছে বিজেপি। এ রাজ্যের মোট ২০০ আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে ১৯৯টিতে। বিজেপি এগিয়ে আছে ১০২টি আসনে, কংগ্রেস ৭৬টিতে। এই রাজ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন ২২ আসনে।
বিজেপির দিক থেকে চমকপ্রদ ফল হতে চলেছে মধ্যপ্রদেশে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত দেড় বছরের শাসন বাদ দিলে টানা ২০ বছর ধরে এই রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায়। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ১৫ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির কাছ থেকে এবার এই রাজ্য ছিনিয়ে নিতে কংগ্রেস মরিয়া প্রচার চালিয়েছিল। কিন্তু প্রাথমিক গণনা দেখাচ্ছে, সব জল্পনা উড়িয়ে বিজেপি বিপুল জয় পেতে চলেছে। ২৩০ আসনের বিধানসভায় বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ১৪৩ আসনে। তুলনায় কংগ্রেস এগিয়ে ৮৪টিতে।
গত ভোটে এই দুই রাজ্যের সঙ্গে কংগ্রেস জিতেছিল ছত্তিশগড়েও। ৯০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ৬৮টি আসন। এবার প্রাথমিক গণনায় দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস ৪৮ আসনে এগিয়ে, বিজেপি ৪২টিতে। আসনসংখ্যা কম হলে আগামী দিনে ছত্তিশগড় কংগ্রেস ধরে রাখতে পারবে কি না, সেই সন্দেহ এখন থেকেই কোনো কোনো মহলে দেখা দিতে শুরু করেছে। বিজেপির সার্বিক শক্তির কাছে কংগ্রেসকে এভাবে বারবার ক্ষমতা হারাতে দেখা গেছে। যেমন মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও মণিপুর।
কংগ্রেসের পক্ষে সুখবর—তেলেঙ্গানা জয়। অন্ধ্র প্রদেশ থেকে ভেঙে তেলেঙ্গানা গঠন হওয়ার পর থেকে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস) এই রাজ্য শাসন করে চলেছে। ক্রমেই টিআরএস নাম বদলে হয় ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)। বিজেপি এই রাজ্যে ধীরে ধীরে জমিও দখল করছিল। কিন্তু কর্ণাটক জয় ও ভারত জোড়ো যাত্রা রাজ্যের ছবিটা বদলে দেয়। ১১৯ আসনবিশিষ্ট বিধানসভায় কংগ্রেস রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৬৮ আসনে এগিয়ে রয়েছে। বিআরএস এগিয়ে ৩৭ আসনে। বিজেপি গতবার এই রাজ্যে পেয়েছিল একটি মাত্র আসন, এবার পাঁচটিতে এগিয়ে।
লোকসভা ভোটের আগে পাঁচ রাজ্যের এই ভোটকে বলা হচ্ছে সেমিফাইনাল। প্রতিটি রাজ্যেই বিজেপির প্রচারের মুখ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রাথমিক ফল শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকলে বোঝা যাবে, হিন্দি বলয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আকর্ষণ এখনো অটুট। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের জনসমর্থনের ওপর নির্ভর করেই মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি ১০ বছর ধরে ভারতের শাসনক্ষমতায়। এই ফলের প্রাথমিক গতিপ্রকৃতি বোঝাচ্ছে হিন্দি বলয়ে মোদির প্রতি সেই আস্থা-ভরসা এখনো অপরিবর্তিত।
পাশাপাশি এটাও বোঝা যাচ্ছে, দক্ষিণ ভারতে বিজেপি সেভাবে শক্তি সঞ্চয় করতে পারছে না। কর্ণাটকে পরাস্ত হওয়ার পর তেলেঙ্গানাতেও তারা তেমন কিছু করতে পারল না। দক্ষিণে বিজেপির উপস্থিতি শুধু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুডুচেরিতে। এটাও বোঝাচ্ছে, ভারত জোড়ো যাত্রা দক্ষিণে কংগ্রেসকে শক্তি জোগালেও হিন্দি বলয়ে সেভাবে পায়ের তলায় জমি শক্ত করতে পারেনি।
এই পাঁচ রাজ্যের ভোটে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ বিজেপির মোকাবিলা করতে পারেনি। লোকসভা ভোটে ‘ইন্ডিয়া’ জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির মোকাবিলা করতে পারবে কি? এই ফলাফলের পর সেই প্রশ্ন প্রাসঙ্গিকতা পাবে।