জাতীয় নির্বাচনের কারণে পার্বত্য অঞ্চলের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমও পিছিয়ে গেল। ডিসেম্বরের মধ্যে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোর (আইওসি) সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের যৌথ কোম্পানি গঠনের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। কারণ মূলধনি কোম্পানি গঠনের আগে গ্যাস বিক্রির নিয়শ্চয়তা চায় তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো। নির্বাচনকালীন সরকার এমন মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তাই এ বছর পাহাড়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এর আগে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান পেছানোর বিষয়টিও নিশ্চিত হয়েছে।
পেট্রোবাংলার একজন পরিচালক জানান, বাপেক্সের সঙ্গে মূলধনি কোম্পানি গঠনে আগ্রহী কোম্পানিগুলো গ্যাস বিক্রির নিশ্চয়তা চেয়েছে। সরকারকে গ্যাস ক্রয়ের নিশ্চয়তা দিতে হলে যৌথ মূলধনি কোম্পানির সঙ্গে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার চুক্তি করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন থাকায় মৌলিক সব ধরেনের কার্যক্রম ঢিমেতালে এগোচ্ছে। এখন নির্বাচনকালীন সরকার। ফলে গ্যাস বিক্রির নিশ্চয়তা আপাতত দেওয়া যাচ্ছে না। আইওসিগুলো এই নিশ্চয়তা না পেলে চুক্তি করবে না। তাই আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের আগে যৌথ কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম খুবই সম্ভাবনাময় এলাকা। যেখানে খুব বেশি কাজ হয়নি। পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা পাহাড়ি এলাকা। ভারতের এই রাজ্যটিতে ১৬০টি কূপ খনন করে ১১টি গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ মাত্র ১৪টি কূপ খনন করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, পাহাড়ে অনুসন্ধানে যৌথ কোম্পানি গঠনে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আগ্রহপত্র চেয়েছিল বাপেক্স। বেশ কয়েকটি কোম্পানি আগ্রহপত্র (ইওআই) জমা দেয়। এর পর দরপত্র আহ্বানের লক্ষ্যে কোম্পানিগুলোকে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) দেওয়া হয়।
আগ্রহপত্র যাচাই করে সাতটি কোম্পানির সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। এগুলো হলো– অস্ট্রোলিয়ার ইনগাজ এনার্জি, হংকংভিত্তিক এমআইই হোল্ডিং, পেট্রো চায়না, চায়না ন্যাশনাল অয়েল এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি, সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইনভেনিয়ার এনার্জি, ভারতের ওএনজিসি ভিদেশ (ওভিএল) এবং রাশিয়ার গ্যাজপ্রম। এর মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে ওএনজিসি, গ্যাজপ্রম ও চীনা একটি কোম্পানি।
সূত্র আরও জানায়, যৌথ প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য উৎপাদন বণ্টন চুক্তির আদলে একটি মডেল ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। এতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রুডের (অপরিশোধিত তেল) দামের ৭ শতাংশ। তবে এর জন্য ক্রুডের দাম ৭০ থেকে ৯০ ডলারের মধ্যে থাকতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাপেক্সের এরই মধ্যে ১০টি ‘স্ট্রাকচার’ (এলাকা) চিহ্নিত হয়েছে। এসব এলাকা মূলত স্থলভাগের গ্যাস ব্লকের ২২-এ এবং ২২-বিতে অবস্থিত। এগুলো হলো ভূয়াছড়ি, সারডেং-সাবতাং, সিসাক, গোবামুড়া-কামুপাড়, চাংগুতাং, বরকল, বেলাছড়ি, গিলাছড়ি, বান্দরবান ও মাতামহুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেছেন, দেশের স্থলভাগে গ্যাস পাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চীমাঞ্চলে ও পার্বত্য এলাকায় খুব বেশি অনুসন্ধান চালানো হয়নি। এসব এলাকা খুব সম্ভাবনাময়।