বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে ঝোড়ো হাওয়া ও উত্তাল ঢেউয়ে ডুবে যাওয়া একটি মাছ ধরা ট্রলারের ১৪ জেলে বাড়ি ফিরেছেন। দুবলারচরসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ২১ ঘণ্টা ভাসার পর ওই জেলেরা রোববার ভোর ৪টার দিকে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার রুহিতা, পদ্মা ও বড়ইতলা এলাকায় আসেন।
এর আগে গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে এফবি তামান্না নামের ওই ট্রলারটি তলা ফেটে ডুবে যায়। তবে গত দুদিনেও এফবি মায়ের দোয়া ও এফবি এলাহী ভরসার ২৫ জেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ও এফবি তামান্না ট্রলারের মালিক আনোয়ার হোসেন রোববার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ফিরে আসা জেলেরা হলেন, হাবিবুর রহমান মাঝি (৩৮), রাজু মুন্সি (২৫), নাসির হোসেন মুন্সি (৫২), সোহাগ মুন্সি (৪০), আবদুর রহিম (২০), মো. হাসিব (২০), মোশারফ হোসেন (৫০), ইউসুফ আলী (৪০), জয়নাল মোল্লা (২০), জাফর সরদার(৫০), রাজু হোসেন (২০), রাহাত হোসেন (১৫), জামাল হোসেন (৪০), মিজানুর রহমান (৪০)। তাঁদের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের রুহিতা ও পদ্মা এবং পাথরঘাটা পৌর এলাকার বড়ইতলা এলাকায়।
নিখোঁজ ১৪ জেলে ফিরে আসায় স্বজনেরা আনন্দিত। মাঝি হাবিবুর রহমানের মা নাসিমা বেগম বলেন, তাঁর দুই ছেলেসহ এ বাড়ির চারজন ওই ট্রলারে মাছ ধরার জন্য সাগরে গিয়েছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ে তাঁদের কোনো খোঁজ না পেয়ে গত দুদিন বাড়িতে আহাজারি চলছিল। রোববার ভোরে ছেলে বাড়ি পৌঁছালে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
এফবি তামান্না ট্রলারের মাঝি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘূর্ণিঝড়ের খবর জানতাম না। এরই মধ্যে হঠাৎ শুক্রবার রাত আটটার দিকে সাগরে ঝোড়ো হাওয়া ও উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে সুকানি ধরা অবস্থায় আমি ট্রলার থেকে দুবার ছিটকে পড়ি। এ সময় ট্রলারে থাকা জেলেদের সাগরে ভাসার প্রস্তুতি নিতে বলি। বলতে না বলতেই তলা ফেটে ট্রলারটি ডুবে যায়। আমরাও ঘণ্টা দুই ট্রলারের পাশে ড্রামে ভাসতেছিলাম। এভাবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ২১ ঘণ্টা সাগরে ভাসতে থাকি। ভাসতে-ভাসতে একসময় দুবলার চর এলাকায় আশ্রয় পাই। পরে দুবলারচর এলাকার কামাল হোসেনসহ স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের ট্রলারে করে শনিবার রাত তিনটার দিকে পাথরঘাটার পদ্মা এলাকায় পৌঁছাই। পদ্মা থেকে রোববার ভোররাতে বাড়িতে আসি। আমরা এভাবে বেঁচে বাড়িতে ফিরব, তা ভাবতেও পারিনি।’
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এফবি এলাহী ভরসা ট্রলারের ১৭ জন ও এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের ৮ জন জেলে গতকাল রোববার বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। এফবি এলাহী ভরসা ট্রলারে থাকা ব্যক্তিরা হলেন আওয়াল বিশ্বাস মাঝি (৫০), শফিকুল ইসলাম (৪০), মো. ফারুক হোসেন (৩৫), আবদুল খালেক (৫০), নান্টু মিয়া (৩৫), মাহাতাব হোসেন (৪৫), সিদ্দিক মৃধা (৪৩), কালু মিয়া (৪০), মনির হোসেন (৪৫), মো. শফিক (৪০), সোবাহান মিয়া (৭১), মো. ইউনুচ মিয়া (৭৩), খলিলুর রহমান (৬১), আবদুর রব (৬৩), আল আমিন (৭৫), মো. লিটন (৪১), মো. কালাম (৩৬)। তাঁদের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার খাকবুনিয়া, কদমতলি, মরখালী, গাজী মাহামুদ ও নলটোনা গ্রামে এবং পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের ছোট টেংরা গ্রামে।
আর এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারে থাকা ব্যক্তিরা হলেন, আবুল কালাম (৪০), মো. জাফর হোসেন (৩৫), মজিবর চাপরাশি (৪০), ইউসুফ খলিফা (৩৫), আবদুস সত্তার (৬০) মো. নাদিম (২০), বেলাল হোসেন (৩০) ও মো. ইয়াছিন (২৫)। তাঁদের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বড় টেংরা, হাজিরখাল ও কালমেঘা ইউনিয়নে।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, পাথরঘাটা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ট্রলার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলার বিকল হয়ে সীমান্ত দিয়ে দেশের বাইরে যেসব জায়গায় যেতে পারে, সেসব এলাকাতেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে গত দুদিনেও তাঁদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁদের পরিবারে আহাজারি চলছে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, নিখোঁজ জেলে ও ফিরে আসা জেলেদের পরিবারকে সোমবার সকালে চাল দেওয়া হবে। একই সঙ্গে নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।