বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পুলিশ সদস্য হত্যায় নেতৃত্ব দেওয়া আমান উল্লাহ আমানকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সোমবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
সিটিটিসি বলছে, ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল পুলিশের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলার মাধ্যমে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া। প্রয়োজনে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা, যাতে করে একটি নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হয়। এরই ভিত্তিতে সেদিন নয়াপল্টনে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজকে হত্যা করা হয়।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিএনপি এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সমাবেশের দিন আমান তার অনুসারীদের নিয়ে নয়াপল্টনে মঞ্চের পাশে অবস্থান নেন। এরমধ্যে কাকরাইলে বিএনপি কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর সুযোগ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের হাইকমান্ডের নির্দেশে নয়াপল্টনে বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের পাশে ভিক্টরি হোটেলের গলি দিয়ে তিনি ছাত্রদলের একটি বড় অংশ নিয়ে পুলিশের ওপরে হামলার জন্য অগ্রসর হন। সমাবেশ কেন্দ্রীক দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকেই তাদের জানা ছিল। পল্টন টাওয়ারের সামনে গিয়ে অগ্রসরমান দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকির দিকে যায়। অপর অংশটি তার নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব প্রান্তের দিকে যায়। পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পরে ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলার প্রেক্ষিতে বক্স কালভার্টের পশ্চিম প্রান্তে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে পূর্ব প্রান্তের পুলিশ সদস্যরা বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিকে অগ্রসর হন। পশ্চিম দিকে অগ্রসরমান পুলিশ দলটির ওপরে আমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় হামলা শুরু হয়। ছাত্রদলের এই অংশটি তার নেতৃত্বে পুলিশদের উপরে ইট- পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
সিটিটিসি প্রধান জানান, আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল ছুড়ে ছাত্রদলের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা চালায়। জানমাল রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ মারণাস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন এবং সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেন। এই পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের একটি বড় অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব দিকে অবস্থিত ডিআর টাওয়ার ও আশেপাশের স্থাপনায় অবস্থান নেয়। তখন তার নেতৃত্বে অনুসারীরা পুলিশ সদস্যদের ক্রমাগত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাকে লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। আমিরুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকে। বিক্ষোভকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার নিথর দেহের ওপরে বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে। শেষে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।