নবজাতকের শ্বাসনালিতে খাবার আটকে গেলে কী করবেন?

0
155

মানুষের দেহে খাদ্যনালি ও শ্বাসনালি পাশাপাশি থাকে। খাবার খাদ্যনালির পরিবর্তে কোনো কারণে শ্বাসনালিতে আটকে গেলে আমাদের তাই বিষম লাগে, হেঁচকি উঠে আবার কখনো–বা নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হয়। নবজাতক বা দুই থেকে তিন মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অনেক সময় নবজাতকের গলায় দুধ আটকে শ্বাসকষ্ট থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

নবজাতকের গলায় দুধ আটকে মৃত্যুর কারণ

অনেক সময়ই মা শুয়ে শুয়ে শিশুকে বুকে দুধ খাওয়ান, এই অবস্থায় দুধ খাওয়ালে বাচ্চার শ্বাসনালিতে দুধ ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে।

শিশু অনেক কাঁদছে বা হাত-পা নড়াচড়া করছে, ঠান্ডা লেগে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে গেছে, এই ধরনের অবস্থায় শিশুকে শোয়া অবস্থায় দুধ খাওয়ানো একেবারেই ঠিক নয়।

অনেক পরিবারের ধারণা শিশুর নাক টিপে ধরলে শিশু বড় করে হা করবে। তখন তাকে বেশি খাওয়ানো যাবে। এই ধরনের ভুল ধারণা নিয়ে শিশুকে নাক চিপে খাওয়ালে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।

শিশুর জন্মগত অনেক ধরনের ত্রুটি থাকে। যেমন কিছু শিশুর হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র, খাদ্যনালিতে সিস্ট বা টিউমার, অতি মাত্রায় স্থুল শিশু বা অতি মাত্রায় শীর্ণ শিশু। আবার যেসব মায়ের হৃদ্‌রোগ থাকে বা যেসব শিশুর জন্মের পরে দীর্ঘ সময় শিশুদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে থাকে, এই ধরনের শিশুদের জোর করে শোয়ানো অবস্থায় খাওয়ালে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

খাওয়ানোর পরে শিশুকে প্রতিবার পিঠে কয়েকবার চাপড়ে দিতে হয়। শিশুরা খাবার সময় অনেক বেশি বাতাস গিলে ফেলে। পিঠে চাপড়ে দিলে বাতাস মুখ দিয়ে বের হয়ে যাবে। শিশুকে বারবার শোয়ানো অবস্থায় দুধ খাওয়ালে এবং পিঠে চাপড়ে না দিলে দুধ খাদ্যনালির পরিবর্তে শ্বাসনালিতে পৌঁছে নিশ্বাস বন্ধ হতে পারে।

যে সব উপসর্গ দেখে বুঝবেন শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বা শ্বাসনালিতে খাবার আটকে যাচ্ছে

হঠাৎ খাবারের সময় বা খাবারের পরে ছটফট করবে। শিশুর বেশি কাশি হবে এবং ঘন ঘন শ্বাস নিবে। এ ছাড়া চোখ বড় বড় করে তাকাবে এবং মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়বে।

খাবার পরে শিশুর শরীর হঠাৎ নীলচে হয়ে গেলে বুঝতে হবে শিশুর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। কারণ, খাদ্যনালির পরিবর্তে দীর্ঘ সময় শ্বাসনালিতে দুধ আটকে থেকে শিশুর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। তখন রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। পরিণামে শিশু হঠাৎ নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

শিশুর শ্বাসনালিতে দুধ আটকে গেলে অনেক অভিভাবকই তা বুঝতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে ফিডিংয়ের পরে শিশু যদি খুব বেশি কান্নাকাটি করে অথবা জোরে জোরে হেঁচকি তোলে, শিশু যদি খুব বেশি বমি করে অথবা একেবারেই পুরো মুখ কালচে লাল হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে, শিশুর কোনো শারীরিক সমস্যা হচ্ছে।

করণীয়

শিশুকে শুয়ে শুয়ে ব্রেস্টফিডিং করানো যাবে না। কোলে নিয়ে বসে খাওয়াতে হবে। প্রতিবার খাওয়ানোর পরে শিশুকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে পিঠে কয়েকবার চাপড়ে দিতে হবে।

গলায় দুধ আটকে গেলে শিশুর নাক দিয়ে দুধ বের হলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে। শিশুকে সোজা করে বুকের সঙ্গে নিয়ে কিছু সময় পিঠের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত হাত বুলিয়ে দিতে হবে। খুব বেশি কান্নাকাটি করলে ঘরের জানালা-দরজা খুলে শিশুকে নিয়ে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করতে হবে।

মা ও শিশুর নিউমোনিয়া বা আগে থেকে শ্বাসকষ্ট থাকলে, শিশুকে খাওয়ানোর পরে শিশুর শ্বাসকষ্ট হলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে।

শিশুকে টিকা দেওয়ার পরে জ্বর আসতে পারে। এই সময় শিশুর নাক বন্ধ, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে। এই অবস্থায় শিশুকে খাওয়ানোর সময় যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.