নানা উদ্যোগের পরও ডলার সংকট বাড়ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকের পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডলারের দর আরও ৫০ পয়সা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকগুলো। বুধবার থেকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানিকারকদের থেকে প্রতি ডলার ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় কিনে আমদানিকারকদের কাছে ১১১ টাকায় বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো। আন্তঃব্যাংকে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১১৪ টাকা।
মঙ্গলবার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদার যৌথ সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। এত দিন ১১০ টাকায় ডলার কিনে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রির সিদ্ধান্ত ছিল। এর আগে সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কয়েকটি ব্যাংকের এমডির সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে বৈঠকের বিষয়ে কোনো পক্ষই মুখ খোলেনি। বৈঠকে ডলার সংকট থেকে উত্তরণে করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, প্রতি ডলার বিক্রি ও কেনায় ৫০ পয়সা দর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে বলা হয়, যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে মাসে ২ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসবে, বাধ্যতামূলক তারা অন্তত ১০ শতাংশ আন্তঃব্যাংকে বিক্রি করবে। আন্তঃব্যাংকে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১১৪ টাকা। মূলত ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক আগের দেনা পরিশোধ করতে পারছে না। এর আগে গত ২১ অক্টোবর এবিবি ও বাফেদার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়ু প্রতি ডলার কিনতে নির্ধারিত ১১০ টাকার সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ বেশি দেওয়া যাবে। লোকসানে ডলার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাংকগুলোতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
করোনার পর বাড়তি চাহিদা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের ব্যাপক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের দর হুহু করে বেড়ে গত বছরের মাঝামাঝি ১১৪ টাকায় উঠে যায়। এর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর ঠিক করে আসছে ব্যাংকগুলো। শুরুতে রেমিট্যান্সে ১০৮ এবং রপ্তানিতে ৯৯ টাকা করা হয়। পর্যায়ক্রমে উভয় ক্ষেত্রে ডলার কেনার দর অভিন্ন করা হয়েছে।
বাজার ঠিক রাখতে দর নির্ধারণের পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে বিক্রির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে এখন ২০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। ২০২১ সালের আগস্টে যা ছিল রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।