বিএনপির মহাসামবেশে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলায় পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের মৃত্যু মানতে পারছেন না তার পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসী। ছেলের মৃত্যুতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও ছয় বছর বয়সের এক মেয়েসহ বাড়ির লোকজন নির্বাক হয়ে পড়েছেন। তাদের কান্না ও আহাজারিতে যেন আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না তারা।
নিহত পারভেজের বাড়ি নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর গ্রামে। তার বাবা সেকান্দার মোল্লা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পারভেজ ২০০৯ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। তিনি ২০১২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বোলদার ইউনিয়নে বিয়ে করেন। সংসারে ৬ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। পারভেজ ডিএমপিতে কর্মরত ছিলেন। নয়াপল্টনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলায় নিহত হয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় পারভেজের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, এই অকাল মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পারভেজের একমাত্র বোন শেফালী আক্তার। আর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে পারভেজের ছোট্ট মেয়ে। এমন মুহূর্ত দেখেও যেন ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
পারভেজের ছোট ভাই আজিজুল হক বিপ্লব বলেন, ‘বৃদ্ধ বাবা ভাইয়ের এই অকাল মৃত্যু সইতে পারছেন না। মৃত্যুর খবর মা শোনার পর থেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে। আমাদের বাড়ি ছিল মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী গ্রামে। নদী ভাঙনে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাওয়ার পর নাগরপুরে এসে বাড়ি করেছি। ভাই বিয়ের পর ভাবিকে নিয়ে ঢাকায় বাসাভাড়া করে থাকতেন। ছুটি পেলেই স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে বাড়ি আসতেন। এখন আর ভাই আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এইভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আন্দোলনের নামে মানুষকে পিটিয়ে মারতে হবে, এ কেমন আন্দোলন।’ এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
পারভেজের বোন জামাই আতোয়ার রহমান জানান, ‘রোববার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ দৌলাতপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পরিবারের সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় করস্থানে দাফন করা হবে।’
দপ্তিয়র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ সিদ্দিকী বলেন, পারভেজরা মূলত দৌলতপুর এলাকার মানুষ। নদী ভাঙনের পর এখানে এসে বাড়ি করেছে। তার অকাল মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।