বাম্পার ফলন হওয়ায় দেশে চালের মজুত পর্যাপ্ত। প্রয়োজন হবে না আমদানির। দামও বাড়বে না। মাস দুয়েক আগে এমন আশ্বাস ছিল সরকার ও চাল ব্যবসায়ী উভয় পক্ষের। এতে আশ্বস্ত ছিলেন ভোক্তারাও। তবে সেই আশার গুড়ে বালি। চালের বাজার হঠাৎ করেই ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় মাঝারি ও মোটা চাল। চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে এসব চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
দাম বাড়ার পেছনে নানা যুক্তি দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, মিল মালিক তথা বড় মজুতদার ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ সময় পর হলেও ভারতের চাল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের সুযোগ নিচ্ছে। তাছাড়া বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার কারণে চালের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে মিলাররা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে মজুত ফুরিয়ে আসছে। সে জন্য মাঝারি ও মোটা চালের বাজার কিছুটা বাড়তি। সপ্তাহ দুয়েক পর নতুন ধান উঠবে। তখন বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
মাস দুয়েক আগে ভারত চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এতে বিশ্ববাজারে তেতে ওঠে চালের বাজার। তবে ওই সময় সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, বোরো ফলন ভালো হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ধান-চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে। এ চাল শেষ হওয়ার আগেই কৃষকের ঘরে উঠবে আমন ফসল। ফলে আমদানি করা লাগবে না। বাজারেও প্রভাব পড়বে না।
তবে সেই আশা এখন নিরাশা। সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার, তেজকুনিপাড়া ও কলমিলতা বাজারে সরেজমিন গিয়ে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে বিআর-২৮ জাতের চালের। বাজারে এ চালের চাহিদাই বেশি। খুচরা পর্যায়ে এ জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা দরে। সপ্তাহ খানেক আগে এ চালের দর ছিল ৫০ থেকে ৫৩ টাকা। খুচরা পর্যায়ে গত সপ্তাহে মোটা চালের (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা দরে।
পাইকারদের পক্ষ থেকে মিনিকেট হিসেবে পরিচিত সরু চালের দাম বাড়েনি দাবি করা হলেও খুচরা বাজারের চিত্র ভিন্ন। মিনিকেট চালের কেজিতেও দুই থেকে তিন টাকা দাম বেড়েছে। ব্র্যান্ড ও মানভেদে এ ধরনের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা দরে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দুই শতাংশ দাম বেড়েছে মাঝারি ও মোটা চালের।
কারওয়ান বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী জালাল আহমেদ বলেন, মানুষ সবচেয়ে বেশি কেনে বিআর-২৮ জাতের চাল। এ মানের চালের বস্তায় (৫০ কেজি) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ কেজিতে দুই থেকে আড়াই টাকা বেড়ে গেছে।
মগবাজার সাভার রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. রাজিব বলেন, মাস দুয়েক আগে ভারত চাল রপ্তানিতে নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক আরোপ করে। তখন বড় মজুতদাররা এর সুযোগ না নিলেও এখন নিচ্ছে।
তবে আমন ওঠার পর দাম কমে আসবে বলে মনে করেন মিল মালিকরা। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, আমন ওঠার আগে অনেকের মজুত ফুরিয়ে আসছে। সে জন্য বিআর-২৮ ও মোটা জাতের চালের দাম সামান্য বেড়েছে। সপ্তাহ দুয়েক পর নতুন ধান উঠবে। তখন বাজারে দাম কমে আসবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, মাঠ পর্যায়ে মজুত পরিস্থিতি ভালো আছে। সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দাম বাড়ার কথা নয়। তবে আমন ধান ওঠার আগ মুহূর্তে কেন বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
জসিম উদ্দিন বাদল