অ্যাপার্টমেন্টের ছাদ থেকে ব্যাপক গুলি, ভবনে থাকা জীবনবিধ্বংসী ফাঁদ। সৈন্যবাহী যুদ্ধযানগুলো উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যোদ্ধারা মিশে গেছে বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে। গোপন অবস্থানে থেকে ড্রোন হামলা শুরু করছে। দীর্ঘ যুদ্ধ টিকিয়ে রাখতে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ, খাবার এবং পানি মজুতকৃত টানেল থেকে উঠছেন তারা। ইসরায়েল স্থল আক্রমণ শুরু করলে এমন দৃশ্য দেখা দিতে পারে গাজায়। খবর: নিউইয়র্ক টাইমস’র
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে ধ্বংস করতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা সীমান্তে ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণের ট্যাঙ্ক জড়ো করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, গাজা সিটি ও অন্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থল আক্রমণে ইসরায়েলি সেনারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে।
নগর যুদ্ধ অধ্যয়ন ও আমেরিকান কর্মকর্তারা গাজার যুদ্ধকে ইরাকের সঙ্গে তুলনা করতে চান। তারা বলছেন, ২০০৪ সালের ফালুজার কথা চিন্তা করুন, ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সৈন্যরা সবচেয়ে ভয়ংকর লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। ২০১৬ সালে ইরাকের মসুলে ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাজিত করতে ৯ মাসের লড়াই হয়েছে। এতে মারা গেছে ১০ হাজার বেসামরিক লোক। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গাজার পরিস্থিতি কয়েকগুণ ভয়াবহভাবে হিসাব করতে হবে।
মসুলে আইএসের যে পরিমাণ যোদ্ধা ছিল, তার চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি যোদ্ধা রয়েছে হামাসের। এর পরিমাণ সম্ভবত সব মিলিয়ে ৪০ হাজার হবে। সংগঠনটির ইরানের মতো দেশগুলো থেকে আন্তর্জাতিক সমর্থন রয়েছে। এসব দেশ থেকে গোলা ও যুদ্ধাস্ত্র মজুত করে। বহিঃশক্তির সহযোগিতা ছাড়াও নিজেরাই গাজাজুড়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছে বছরের পর বছর চেষ্টায়। গাজা শহরের রাস্তাও তাদের যুদ্ধ কৌশলের অংশ। এসব রাস্তায় ট্যাঙ্ক ও সুনির্দিষ্ট যুদ্ধাস্ত্র ধ্বংস করতে গেরিলা কৌশল কাজে লাগাতে পারেন তারা।
মার্কিন সেনাবাহিনীর কৌশলবিদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল টমাস আর্নল্ড বলেছেন, ইসরায়েলের স্থল আগ্রাসন কুৎসিত হতে চলেছে। গাজার শহরগুলো ‘শয়তানের খেলার মাঠ’। হামাস সবকিছু চরম কঠিন করে তুলেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে ধ্বংসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গাজা ও হামাস গভীরভাবে যুক্ত। ব্যাপক নগরায়ণের ফলে গাজা বিশেষভাবে জটিল একটি যুদ্ধক্ষেত্র।
সামনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসন ইরাকে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে ইসরায়েলিদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে। স্থল আক্রমণ শুরু বিলম্বিত করতে চাপ দিয়ে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির জন্য আলোচনায় আরও সময় দেওয়ার জন্য বলেছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে গাজার ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের মধ্যে প্রাণহানি রোধ করার মতো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই ইসরায়েলের কাছে।
ইউএস মিলিটারি একাডেমির মডার্ন ওয়ার ইনস্টিটিউটের শহুরে ওয়্যারফেয়ার স্টাডির চেয়ারম্যান জন ডব্লিউ স্পেনসার এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, গাজায় বিমান হামলায় শতাধিক ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। সাম্প্রতিক হামলার অনেক আগেই গাজা শহরের নিচে শত শত মাইল টানেল তৈরি করে রেখেছে হামাস। যা আক্রমণ অবস্থানের মধ্যে চলাচল করতে, জিম্মিদের লুকিয়ে রাখতে এবং যুদ্ধ সরঞ্জামসহ অন্য সব সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যবহার করা হতে পারে।
এ ছাড়া আরও চমক রয়েছে হামাসের। ইসরায়েল আক্রমণ করলে পাওয়া যাবে– গাজার স্কুলের অধীনে রকেট কারখানা, মসজিদে মজুত অস্ত্র।
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কর্নেল আর্নল্ড বলেছেন, ইসরায়েল স্থল আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শর্ত নির্ধারণ করছে, ভবনগুলো ধ্বংস করছে। সৈন্যদেরও প্রস্তুত করছে। বলা যায়, অন্য পক্ষও নিশ্চিতভাবেই প্রস্তুত হচ্ছে।