নির্বাচনের পর শেয়ারবাজার পরিস্থিতি ভালো হবে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে এমন ধারণা দিয়েছে। বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির সময়েও শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বেড়েছিল। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। সরকার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কমিশন আশা করছে, আগামী নির্বাচনের পর চলতি সংকট কেটে যাবে। তখন শেয়ারবাজারেও তারল্য বাড়বে।
ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফের একটি দল এখন বাংলাদেশ সফর করছে। তারা শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য জানতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বৈঠক করছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইএমএফের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। বিএসইসির পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এ ছাড়া কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান, আব্দুল হালিম, নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, আনোয়ারুল ইসলাম এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম অংশ নেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক শেয়ারবাজার পরিস্থিতি, নতুন নীতি উদ্যোগ, বন্ড বাজার এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে আলোচনার এজেন্ডা ছিল। এর বাইরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়। আইএমএফ প্রতিনিধি দল সরকারের ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে ডলারের দর এবং ব্যাংকের সুদহার বাজারভিত্তিক করার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপের মাধ্যমে ‘কৃত্রিম বাজার’ তৈরির বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি বলে জানান বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা। বিএসইসির মুখপাত্রও বলেন, এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।
বিএসইসির কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, আইএমএফ প্রতিনিধি দল শেয়ারবাজারের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চেয়েছিল। বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর বৈশ্বিক পণ্যবাজারে উল্লম্ফনের কারণে একদিকে পণ্য কিনতে বেশি দাম গুনতে হয়েছে, অন্যদিকে রেমিট্যান্স আয় সেভাবে বাড়েনি। বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যাওয়ার প্রভাবে মুদ্রাবাজারে কিছু তারল্য চাপ আছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতিও নেওয়া হয়েছে। এতে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ কমেছে। বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির সময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রে সংকুচিত হয়ে পড়ে। ওই সময় অনেকে তাদের অলস অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। এ কারণে দৈনিক লেনদেন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের পর অর্থ বাজারের সংকটের প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়েছে। এখন লেনদেন ৫০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। বর্তমানে ডলার বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কারণে সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে চাপ আসছে, জাতীয় নির্বাচনের পর সরকার আরও বাস্তবমুখী কিছু নীতি উদ্যোগ নিলে তা কেটে যাবে। তখন শেয়ারবাজারে ফের তারল্য প্রবাহ বাড়বে।
বৈঠকে শেয়ারবাজারে নতুন নীতি উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পক্ষ থেকে আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়, ইতোমধ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এ-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশিত হবে। এক বছরের মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হবে। আইএমএফ প্রতিনিধি দল মনে করে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে হলে সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি (সিসিপি) লাগবে। বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে সিসিপি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে যা কার্যক্রমে আসবে। এ ছাড়া রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট করার উদ্যোগ আছে। ফলে এ খাতের অর্থায়ন সহজ হবে।
আলোচনায় বন্ড বাজারের উন্নয়ন নিয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হয়। এখানে সরকারি বন্ড বাজার সক্রিয় করা হচ্ছে। বেসরকারি খাতের বন্ডগুলো তালিকাভুক্ত হচ্ছে। তবে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে গ্রিন বন্ড চালু, সমুদ্র অর্থনীতির জন্য ব্লু বন্ড এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অরেঞ্জ বন্ড চালুর বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পক্ষ থেকে সরকারের এ উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে। বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, পেনশন ফান্ডের অর্থ নানা বন্ডে বিনিয়োগ করবে বলে সরকার ঘোষণা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফিক্সড ইনকাম ফান্ডে বিনিয়োগ করলে তাতে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে এবং তা সার্বিক শেয়ারবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাজার পরিস্থিতি
গতকাল ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে আগের দিনের তুলনায় সূচক ও লেনদেন কিছুটা বাড়লেও দরবৃদ্ধির তুলনায় দর হারানো শেয়ার সংখ্যা বেশি ছিল। ৬৬ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৭৮টির দর কমেছে এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৭৫টির দর। ক্রেতার অভাবে ৭৩ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের কোনো লেনদেন হয়নি।
বেশির ভাগ শেয়ারের দর কমার পরও ডিএসইএক্স সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে ৬২৬৫ পয়েন্টে উঠেছে। সার্বিক লেনদেন প্রায় ৮৯ কোটি টাকা বেড়ে ৪৭৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও বীমা খাতে লেনদেন বেড়েছে বেশি।