আমরা যেটিকে পেপটিক আলসার বলে থাকি তার কারণ অতিরিক্ত এসিড বা অম্ল নিঃসরণ। এটি মূলত হয় পাকস্থলী এবং ডিওডেনামে। এ ছাড়া অন্ত্রের আরও কিছু স্থানে আলসার হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটি জীবাণুর আক্রমণ হলে এমনটি ঘটে। এটি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। নাম হেলিকো ব্যাকটর পাইলোরি।
কীভাবে ছড়ায়
ঘনবসতিপূর্ণ, ঘিঞ্জি, নোংরা পরিবেশ এদের খুব পছন্দের আবাস। এটি ছড়ায় মুখ থেকে মুখে কিংবা পায়ু থেকে মুখে। এই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত এক ব্যক্তির গ্লাসে আরেক ব্যক্তি পানি পান করল– ব্যস এতেই পথ খুঁজে পেল ব্যাকটেরিয়াটি নতুন আবাস। পরিবারের সদস্য একজন আক্রান্ত হলে সবাই এ ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে সে কারণে।
আলসারের অন্য কারণ: এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্তের পর যে কারণে আলসার বেড়ে যাচ্ছে তাহলো বেদনানাশক ওষুধ। ডাইক্লোফেনাক, এসপিরিন, আইবুপ্রফেন, কিটো রোলাক– যে নামেই হোক না কেন এরা পাকস্থলীর প্রাচীরের বিশাল ক্ষত সৃষ্টি করছে। ধূমপানের ফলে এসিড নিঃসরণের হার বেড়ে যায়। এমনটি ঘটতে পারে অ্যালকোহল সেবনের ফলেও। এ ছাড়া চা, কফি, অতিরিক্ত ঝাল, মসলা, ভাজাপোড়া খাদ্য এসিডিটি অবস্থার জন্য দায়ী। মানসিক অভিঘাতের কারণেও এসিড নিঃসরণ বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া কিছু কিছু রোগেও পাকস্থলীর এসিড নিঃসরণ বেড়ে আলসার হতে পারে।
আলসারের লক্ষণ: আলসার হলে পেটে ব্যথা হবে। এ ব্যথা হয় পেটের উপরিভাগে। জ্বালাপোড়া ব্যথা। সাধারণত খাওয়ার পরপরই বেড়ে যায় পাকস্থলীর ব্যথা। খাওয়ার ৩-৪ ঘণ্টা পর বেড়ে যায় ডিওডেনামের ব্যথা। বমি ভাব দেখা দিতে পারে। ভয়ংকর কিছু লক্ষণও দেখা যায় এ রোগে। সেগুলো হলো রক্তবমি, কুচকুচে কালো পায়খানা, ঢোক গিলতে সমস্যা, ওজন হ্রাস, রক্তশূন্যতা, অরুচি, পেটের মাঝে চাকা অনুভূত হওয়া। বয়স ৫৫ বছরের বেশি হলেও আলসারের কারণ নির্ণয় করা জরুরি। করণীয়: ধূমপান, মদ পান পরিহার করুন। অতিরিক্ত চা, কফি, কোলা পান করবেন না। বেদনানাশক ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণে সাবধান। মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকুন। অতিরিক্ত ঝাল, মসলা, তেল পরিহার করুন। ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণের সংযমী হোন। পরিবারের সদস্যরা আলাদা আলাদা থালা-গ্লাস ব্যবহার করুন। ভয়ানক লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করুন। হেলিকো ব্যাকটর পাইলোরি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করুন।
লেখক: মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা।