হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা: হাইকোর্টের রায় ৩০ অক্টোবর

0
136
২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা চালানো হয়, ফাইল ছবি

হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় হাইকোর্টের রায় ৩০ অক্টোবর। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেছেন।

বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির আইনজীবী মো. আরিফুল ইসলাম আজ শনিবার বলেন, আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর ১১ অক্টোবর শুনানি শেষ হয়। সেদিন হাইকোর্ট রায়ের জন্য ৩০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাত আসামি এখন কারাগারে।

সাত বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে এবং কুপিয়ে ও গুলি করে ২২ জনকে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইতালির নাগরিক নয়জন, জাপানের সাতজন, ভারতের একজন ও বাংলাদেশি তিনজন। আর সেই রাতে জিম্মিদের মুক্ত করতে অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের বোমা হামলায় নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। তাঁরা হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন। ভয়াবহ এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে পুরো দেশ।

এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। বিচারিক আদালত কোনো আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত।

বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলার নথিপত্র ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আসে। পরে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে তা নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল (আবেদন) করেন। ডেথ রেফারেন্সের শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করতে হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলায় পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করা হয়। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধান বিচারপতি ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন। পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গত মে মাসে রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি শুরু করে। ১১ অক্টোবর শুনানি শেষে আদালত রায়ের দিন ধার্য করেন।

হাইকোর্টে এ মামলার শুনানিতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আরিফুল ইসলাম ও আমিমুল এহসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাশ। এ ছাড়া আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত হিসেবে আইনজীবী ছিলেন এস এম শফিকুল ইসলাম।

হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার দুই বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ এই হামলার মামলায় ১১৩ জন সাক্ষী হাজির করে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নিহত পুলিশ সদস্যদের স্বজন, হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে আহত পুলিশ সদস্য, হোলি আর্টিজান বেকারির মালিক ও কর্মী, জিম্মি হয়ে পড়া অতিথি এবং যেসব বাড়িতে আস্তানা তৈরি করে জঙ্গিরা নৃশংস এই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, সেসব বাড়ির মালিকেরা।

নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। আসামিরা হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ।

হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গি অভিযানে নিহত হন। তাঁরা হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার ছাত্র মীর সামেহ মোবাশ্বের, মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের ছাত্র নিবরাস ইসলাম এবং বগুড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

ভয়াবহ ওই জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একের পর এক অভিযান চালিয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়, ভেঙে দিয়েছে জঙ্গিদের অনেক আস্তানা। এসব অভিযানে নিহত হন হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীসহ গুরুত্বপূর্ণ আট জঙ্গি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.