মস্তিষ্কের বিকাশজনিত একটি সমস্যা অটিজম। আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত তাদের বয়স অনুযায়ী বুদ্ধি খাটিয়ে কোনো খেলা বা সমস্যা সমাধান, ভাষাগত দক্ষতা অর্জন ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়া করতে পারে না। এই শিশুরা অন্য বাচ্চাদের তুলনায় আলাদা রকম আচরণ করে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ পেতে থাকে লক্ষণগুলো। যেমন একই জিনিস পুনরাবৃত্তি করা, অস্থির আচরণ ও আই কন্ট্যাক্ট না করা।
প্রারম্ভিক পর্যায়ে অটিজমের উপসর্গগুলো মা-বাবা শনাক্ত করতে পারলে শিশুকে অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা যেতে পারে। তাই বয়স অনুযায়ী বিকাশের কোনো ধাপে অসামঞ্জস্য লক্ষ করলে অভিভাবকদের সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ভাষাগত বিকাশ: অনেক সময় আমরা এই শিশুদের মায়েদের কাছ থেকে শুনে থাকি যে দুই-আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চা কথা বলতে পারত, তারপর ধীরে ধীরে আর এখন একদম পারে না।
ইন্দ্রিয়ের বিকাশ: দেখা, শোনা, ঘ্রাণ ও স্বাদ—প্রতিটি ইন্দ্রিয়ের জন্য উপসর্গ আলাদা। যেমন একটা বাচ্চা যদি স্পর্শ সহ্য করতে না পারে, তার অর্থ হচ্ছে বাচ্চার ট্যাকটাইল হাইপারসেনসিটিভিটি আছে। সেন্সর ইন্টিগ্রেশন থেরাপির মাধ্যমে এসব সমস্যা কমানো সম্ভব।
করণীয়
অটিজম আক্রান্ত শিশুর জন্য স্পিচ থেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, পুষ্টিবিদ, চাইল্ড ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের সমন্বিত ভূমিকা প্রয়োজন। অভিভাবকদের নিজেদের ভূমিকা অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। মনে রাখবেন, শিশুদের একমাত্র কাজ হলো খেলা। খেলার মাধ্যমেই শিশু ধাপে ধাপে স্বাভাবিক বিকাশ লাভ করে। এ জন্য শিশুর সঙ্গে কথা বলতে হবে, গান ও ছড়া শোনাতে হবে, ছবির বই দেখাতে হবে।
জেনে নিন জরুরি কিছু বিষয়
১. পেশির দুর্বলতার কারণে অনেকেই পেনসিল ধরার মতো সূক্ষ্ম কাজ করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে শিশুর আঙুলের সমন্বয় ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে তাকে কাদামাটি বা ময়দার খামির দিয়ে খেলতে দিন।
২. নিজেও তার সঙ্গে খেলায় মেতে উঠুন। শিশুকে বেশি বেশি খেলাধুলায় আগ্রহী করুন, যেমন: বাস্কেটে বল ছোড়ার কাজটি সে বারবার করবে। প্রতিদিন একই নিয়মে একটি কাজ করলে মনোযোগ ও কার্যক্ষমতা বাড়বে।
৩. শিশুর সঙ্গে রং নিয়ে খেলার জন্য দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন। তার সঙ্গে পালা করে খেলুন। যেমন একটা ত্রিভুজ এঁকে তাতে রং করা। খেয়াল রাখতে হবে শিশু যেন ধীরে ধীরে সময় নিয়ে কাজটা শেষ করে। এতে মনোযোগ বাড়বে।
৪. টয়লেট ট্রেনিং শেখাতে হবে। নিজের জামাকাপড় যেন নিজেই পরতে পারে, তা শেখাতে হবে। তাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন নিজের দরকারি কাজটুকু নিজেই চালিয়ে নিতে পারে।
৫. অন্য শিশুর সঙ্গে কখনোই তাকে তুলনা করা যাবে না। সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে।
পরিবারের সবাইকে যা করতে হবে
১. বাড়ির সবাইকে বাচ্চার সব কাজে প্রশংসা করতে হবে।
২. আদর, উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিয়ে কাছে টেনে নিতে হবে, ভালোবাসা দেখাতে হবে। হাসিখুশি ভাবে তার সামনে থাকতে হবে।
মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা
একজন মায়ের নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াটাও ভীষণ জরুরি, যা তার শিশুটির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু অটিজম আক্রান্ত শিশুর মা-বাবা অনেক সময় হতাশায় ভোগেন, ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন। বিশেষত মায়েরা অনেক সময় পরিবার থেকে যথোপযুক্ত সহানুভূতি ও সহযোগিতা থেকেও বঞ্চিত হন। মা-বাবার মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্যারেন্টিং কাউন্সেলিং নেওয়াটা বিশেষভাবে জরুরি। পরিবারের সবার সমর্থনও আবশ্যক।
শামিমা সিরাজী: সিনিয়র চাইল্ড সাইকোলজিস্ট, আইসিডিডিআরবি