আবার বাড়তে শুরু করেছে কাঁচা মরিচের দাম। রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত ১০০ টাকা বেড়েছে। গতকাল শনিবার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম পড়ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
বিভিন্ন জেলা–উপজেলার বাজারে দাম আরও বেশি। বগুড়ার মতো উৎপাদন এলাকায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে এই পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
গত ঈদুল আজহার ঠিক পরপর কাঁচা মরিচের দর প্রতি কেজি ৭০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তারপর ধীরে ধীরে দাম কমে আসে।
বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে গেছে। সে কারণে নতুন করে আবার দাম বাড়ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকার আশপাশে ছিল। এমনকি ৮০ টাকা কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি। এখন ২০০ টাকার কমে কোনো মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল রাজধানীর মালিবাগ ও মগবাজারের সবজি বিক্রেতারা জানান, বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম। তাতে দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গতকাল তা বেড়ে হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
মালিবাগের সবজি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে গেছে। সে কারণে নতুন করে আবার দাম বাড়ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকার আশপাশে ছিল। এমনকি ৮০ টাকা কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি। এখন ২০০ টাকার কমে কোনো মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না।’
আমদানিকারকেরা বলছেন, কাঁচা মরিচের দাম এখন ভারতেই বেশি। এই মরিচের আমদানি খরচের সঙ্গে যোগ হচ্ছে পরিবহন, শ্রমিক ও শুল্ক খরচ। গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে ডলারের দাম। আবার আমদানিতে ডলারের যে আনুষ্ঠানিক দাম, বাস্তবে তার চেয়েও বেশি দামে আমদানিকারকদের ডলার কিনতে হচ্ছে।
সাধারণত নভেম্বর থেকে জুলাই মাসে দেশে উৎপাদিত কাঁচা মরিচে চাহিদা মিটে যায়। সরকারের অনুমতি ছাড়া কাঁচা মরিচ আমদানি করা যায় না। গত ঈদুল আজহার আগে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেলে সরকার ২৫ জুন আমদানির অনুমতি দেয়। ব্যবসায়ীরা আমদানি করা কাঁচা মরিচের পুরোটাই আনছেন ভারত থেকে।
চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ঠিক কী পরিমাণ কাঁচা মরিচ আমদানি করা হয়েছে, তার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) পুরো সময়ে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ২১ টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) আমদানি করা হয় ৭ হাজার ৪৬৭ টন কাঁচা মরিচ।
উৎপাদন এলাকা বগুড়ায় গতকাল খুচরায় এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। আর মহাস্থান হাটে পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকা।
ঢাকার বাইরে দাম আরও বেশি
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকায় আমদানি করা কাঁচা মরিচ আসায় দাম কিছুটা কম; বরং দেশে উৎপাদন এলাকায় বেশি।
উৎপাদন এলাকা বগুড়ায় গতকাল খুচরায় এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। আর মহাস্থান হাটে পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকা।
মহাস্থান হাট কাঁচা ও পাকা মাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে কৃষকের খেতে মরিচ নষ্ট হওয়ায় স্থানীয়ভাবে সরবরাহ কমেছে। দিনে গড়ে ৫০ মণ কাঁচা মরিচও এখানে আসছে না। তাতে দামের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে।
ঢাকার কাছের জেলা মানিকগঞ্জেও কাঁচা মরিচের একই রকম দাম দেখা গেছে। সেখানে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে। গতকাল পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। খুচরা বাজারে দাম ছিল ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি।
মানিকগঞ্জ জেলা সদরের জাগীর কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, এখন মরিচের ফলন নেই। আমদানি করা মরিচও কম আসছে। খেতের কাঁচা মরিচ আসতে যেহেতু আরও সময় বাকি, তাই আমদানি বাড়াতে হবে।