গভর্নর হিসেবে একটি র্যাঙ্কিংয়ে ‘ডি গ্রেড’ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
একই র্যাঙ্কিংয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস পেয়েছেন ‘এ প্লাস’ গ্রেড। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ভীরাসিংহে পেয়েছেন ‘এ মাইনাস’ ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জামিল আহমেদ পেয়েছেন ‘সি মাইনাস’।
গভর্নর হিসেবে এ প্লাস পেয়েছেন মাত্র তিনজন গভর্নর। বাকি দুজন হচ্ছেন— সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর টমাস জর্ডান ও ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নগুয়েন থি হোং।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গ্লোবাল ফিন্যান্স ম্যাগাজিনের র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের এভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গভর্নরদের মূল্যায়ন করে আসছে গ্লোবাল ফিন্যান্স ম্যাগাজিন। সাময়িকীটির বার্ষিক প্রকাশনা হিসেবে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড’। ১০১টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের সবশেষ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছে গ্লোবাল ফিন্যান্স ম্যাগাজিন। বহিস্থ খাতের অনিশ্চয়তা ও চাপের মুখে অর্থনীতি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। ২০২২ সালের বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় যেভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বহিস্থ খাতে যে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেটা উল্লেখ করে দেশের অর্থনীতির অনিশ্চয়তার চিত্র তুলে ধরেছে তারা।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোভিড-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে টাকার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়। দেশের বাজারে ডলার–সংকটে হিমশিম খান আমদানিকারকেরা। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য অনেকটা বেড়ে মূল্যস্ফীতি লাগামহীন হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ।
ভারত সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে (এপ্রিল-মার্চ) ভারতের অর্থনীতি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, প্রবৃদ্ধি হয় ৯ দশমিক ১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ ধারা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সূচকেও ভালো করে ভারত। যেমন মূল্যস্ফীতি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটিতে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) ছিল ৬ শতাংশ, মে মাসের মধ্যে তা ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে তারা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আরবিআই এ সময়ের মধ্যে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে ছয় দফায়। আরবিআইয়ের এই কৃতিত্বের মূল কান্ডারি গভর্নর শক্তিকান্ত দাস।
তবে জুলাইয়ে ভারতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪ শতাংশে উঠলেও তা হয়েছে মূলত অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে। এই ধারা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তারপরও বিশ্লেষকেরা ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট হারে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কথা বলেছেন।
এ ছাড়া দেশটির ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায়ও সফল শক্তিকান্ত দাস। সে কারণে তিনি এ প্লাস পেয়েছেন।
অন্যদিকে দুর্দশাগ্রস্ত শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের ভালো করার কারণ হলো, দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে তিনিই মূলত নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আগস্টে দেশটির মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। তাঁর নেতৃত্বে দেশটি সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, যদিও এ বছর দেশটি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না বলে মনে করছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে তাঁর নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার যে পুনরুদ্ধার হচ্ছে, সেই কৃতিত্ব তাঁকে দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই তিনি এ মাইনাস পেয়েছেন।