পোস্টমাস্টার ও ব্যাংক এজেন্ট মিলে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ

0
151
গ্রেফতার

ডাক বিভাগের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পোস্ট ই-সেন্টারে ১ লাখ টাকা জমা দিতে যান কৃষক জাহিরুল হাসান সরদার। পোস্টমাস্টার তাঁকে ব্যাংক এজেন্টের কাছে টাকা জমা দিতে বলেন। এর পর সংশ্লিষ্ট এজেন্ট টাকা নিয়ে তাঁকে একটি জমার রসিদ দেন। বছরখানেক পর ওই গ্রাহক জানতে পারেন, ডাকঘরে যারা টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের সবার টাকা খোয়া গেছে। এ খবর পাওয়ার পর গত ৩১ জুলাই তিনি ডাকঘরে গিয়ে জানতে পারেন, পোস্টমাস্টার বদলি হয়েছেন, অফিস বন্ধ করে পালিয়েছেন এজেন্ট।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পোস্ট ই-সেন্টারে এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী মামলা করেন। সেটির তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তে জানা যায়, পোস্টমাস্টার ও ব্যাংকের এজেন্ট মিলে ভুয়া জমা রসিদ দিয়ে গ্রাহকদের অন্তত ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষে আরও পাঁচটি মামলা করা হয়। সেগুলোর কোনোটির তদন্ত চলমান, কোনোটির তদন্ত প্রতিবেদন এরই মধ্যে জমা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত ভুক্তভোগী প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে ধারণা তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের।

পিবিআই সাতক্ষীরার সহকারী পুলিশ সুপার এ বি এম রেজাউল ইসলাম বলেন, গ্রাহকের দেওয়া টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে পোস্টমাস্টার সুদিন কুমার বৈদ্য ও ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট আতাউর রহমান এখন কারাগারে। এ ছাড়া তদন্তে ব্যাংকটির তালা শাখার কাস্টমার সার্ভিস অফিসার নাজমুল হোসেন ও এজেন্টের সহকারী টুটুল দেবনাথের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

তদন্ত সূত্র জানায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাজকে সহজ করার উদ্দেশ্যে সরকারি উদ্যোগে ডাকঘরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পোস্ট ই-সেন্টার চালু করা হয়। এটি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোক্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী নন, সেবাদানের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি অংশ তিনি পান। ডাকঘরের গ্রাহকদের ব্যাংকিংয়ের জন্য যেন অন্যত্র যেতে না হয়, সেই চিন্তা থেকে পোস্ট অফিস সংলগ্ন ব্যাংকিং কার্যক্রমও চালু করা হয়। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দিতে ব্যাংক এশিয়া ডাক বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রতিটি ডাকঘরে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাংকটি একজন করে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। তিনি একাধারে ওই ডাকঘরের পোস্ট ই-সেন্টারের উদ্যোক্তা।

এ মামলায় অভিযুক্ত আতাউর রহমান ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে তালা ই-সেন্টারের উদ্যোক্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ডাক বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে ২ লাখ পর্যন্ত টাকা একবারে জমা করা যায়। এর বেশি হলে যে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে সেই ব্যাংকের চেক ডাকঘরে জমা দিতে হয়। এজেন্ট আতাউর যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই গ্রাহকদের টাকা নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখতে শুরু করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা সাতক্ষীরা পিবিআইর এসআই মতিয়ার রহমান জানান, ভুক্তভোগী জাহিরুল হাসান গত বছরের ১৮ অক্টোবর পোস্টমাস্টারের কথা অনুযায়ী এজেন্ট আতাউরের কাছে ১ লাখ টাকা জমা দেন। এজেন্ট তাঁকে স্বাক্ষর-সিলযুক্ত ভুয়া জমার রসিদ দিয়ে বলেন, টাকা জমা হয়ে গেছে। এর পর জুলাইয়ে বাদী অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি জানতে পারেন। সেই সঙ্গে অর্পণা রানী পাল, সোহাগ শেখ, আছমা বেগম, কামেলা বিবিসহ অন্য গ্রাহকরাও ডাকঘরে গিয়ে দেখেন, তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.