শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু থেকে দ্রুত সুস্থ হতে চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক খাবার গ্রহণ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, মাংসপেশিতে ব্যথা, হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা ইত্যাদি ডেঙ্গুর উপসর্গ। এবার কারও কারও প্রচণ্ড ঠান্ডা লাগাও থাকছে। কারও কারও ত্বকে র্যাশ দেখা দিচ্ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা অনেকটাই কমে যায়। এ ছাড়া শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। ক্লান্তিভাব দেখা দেয় সারা শরীরে। এ কারণে চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক ডায়েট এ সময় রোগীর জন্য একান্ত প্রয়োজন।
এ সময় পর্যাপ্ত পানি পান, তরল খাবারের পাশাপাশি ডায়েটে প্রোটিন, প্রোবায়োটিক ও আয়রনযুক্ত খাবার থাকা জরুরি।
দুধ, দই ও দুগ্ধজাত খাবার প্রোবায়োটিকসের সমৃদ্ধ উৎস। দইয়ে থাকা ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক ব্যাকটেরিয়া আমাদের অন্ত্রের উপকার করে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে দুগ্ধজাত খাবার শরীরে পটাশিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়ামের পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
প্রোটিন জাতীয় খাবার তাড়াতাড়ি রোগ সারাতে মুখ্য ভূমিকা নেয়। তাই এই সময় খাবারে মাছ, মাংস, ডাল, ডিম, বাদাম ইত্যাদি থাকা একান্ত জরুরি।
জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে তরল খাবার খাওয়া তুলনামূলক সহজ। তাই এ সময় শক্ত খাবারের পরিবর্তে তরল খাবার যেমন মাংসের স্যুপ, দইয়ের লাচ্ছি ইত্যাদি খাওয়ানো উচিত। এ ক্ষেত্রে খাবার দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পরপর পরিবেশন করা ভালো।
সবুজ শাকসবজি ভিটামিন কে ও আইয়ের সমৃদ্ধ উৎস। এ দুটি ভিটামিনই রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজনীয় ইত্যাদি রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি ও ফোলেটও প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। কমলালেবু, পাতিলেবু, জলপাই, আনারস, বেরি ও কিউই ফল এই ভিটামিনের সমৃদ্ধ উৎস।
ডেঙ্গু রোগীরা বিটরুটের স্যুপ খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি, ভিটামিন (বি৯, ভিটামিন সি), খনিজ পদার্থ (ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, আয়রন) রয়েছে।
রোগী যখন ডেঙ্গু থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন, তখন সহজে হজমযোগ্য খাবার যেমন– খিচুড়ি, দই, ভাত, পোরিজ, সেদ্ধ আলু সেদ্ধ শাকসবজি, পেঁপে, কুমড়া, সবুজ মটর ইত্যাদি খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে। পাশাপাশি দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পর্যাপ্ত পানি, তরল খাবার খেতে হবে। এ ছাড়া ডাবের পানি, ফলের রস খেতে হবে।
এ সময় মসলাদার ও বেশি তেলযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। সফট ড্রিংকস, উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবারও এই সময় এড়িয়ে চলা দরকার।
লেখক: সহকারী রেজিস্ট্রার (মেডিসিন), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর