গণপরিবহন বেহালে বাড়ছে প্রাইভেটকার, যানজট

0
160
প্রাইভেটকার

প্রাইভেটকার ব্যবহারে বছরে ইঞ্জিনের ক্ষমতাভেদে ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আগাম আয়কর দিতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে একাধিক প্রাইভেটকারের মালিকদের দ্বিতীয় থেকে পরবর্তী প্রতি গাড়ির জন্য ইঞ্জিনের ক্ষমতাভেদে ২৫ হাজার থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত ‘কার্বন কর’ দিতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও প্রাইভেটকারের সংখ্যা কমছে না, বরং বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহনের বেহাল দশার কারণে দেশে কোটিপতি সংখ্যার মতো বাড়ছে প্রাইভেটকারও।

এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। ২০১৬ সাল থেকে দিনটি সরকারিভাবে পালিত হলেও প্রাইভেটকার বাড়ছেই।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরে সারাদেশে নতুন প্রাইভেটকার এবং জিপ নিবন্ধিত হয়েছে ২৬ হাজার ৯৩৫টি। গড়ে দিনে ৭৫টি সড়কে নামছে। একই বছরে সড়কে নতুন বাস নেমেছে ৩ হাজার ৯০টি।

যানজটে নাকাল রাজধানী ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গত বছর নতুন প্রাইভেটকার এবং জিপ নিবন্ধিত হয়েছে ২৪ হাজার ২৯৬টি। দিনে গড়ে ৬৬টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি নামছে ঢাকার নিশ্চল সড়কে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ১১ হাজার ৩৩৪টি ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে। বিপরীতে বাস ও মিনিবাস নিবন্ধিত হয়েছে ১ হাজার ৭০২টি।

২০১০ সাল পর্যন্ত ঢাকায় নিবন্ধিত প্রাইভেটকারের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ১৭০টি। ১৪ বছরে তা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিবন্ধিত প্রাইভেটকারের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬। একই সময়ে জিপগাড়ির সংখ্যা ১৭ হাজার ৮৩৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার ৯৭৩।

ঢাকার যানজট নিরসনে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় গণপরিবহনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল, দুটি বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) এবং তিনটি বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামান। তিনি বলেছেন, গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না হলে যার হাতে টাকা থাকবে, সেই ব্যক্তিগত গাড়ি কিনবে। আগাম আয়কর বসিয়ে নিরুৎসাহিত করা যাবে না।

গণপরিবহনের দুরবস্থার কারণে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও বাড়ছে রকেটের গতিতে। গত বছর সারাদেশে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯১২টি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৪৮টি নিবন্ধন নিয়ে ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাজধানীতে নেমেছে। চলতি বছরের আট মাসে সংখ্যাটি ৬২ হাজার ৬৪৩।

যানজটের এমন ভয়ানক চিত্রের জন্য মাত্রাতিরিক্ত ব্যক্তিগত গাড়ি ও তার বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিধায় মধ্যবিত্তও প্রাইভেটকারে ঝুঁকেছে। গাড়ি বেড়েছে, সড়ক বাড়েনি। তাই যানজটে শহর স্থবির হয়ে গেছে। ঢাকাকে বাঁচাতে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ফেলোদের গবেষণার তথ্যানুযায়ী, ঢাকার সড়কের ৭৬ ভাগ ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। কিন্তু এসব গাড়ির যাত্রী মাত্র ৬ শতাংশ। বাকি ২৪ ভাগ সড়ক ব্যবহারের সুযোগ পান ৯৪ শতাংশ যাত্রী।

রাজীব আহাম্মদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.