যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক ছাড় চাইবে বাংলাদেশ

ঢাকায় টিকফা বৈঠক কাল

0
161
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি

আসন্ন টিকফা বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় উৎপাদিত পোশাক সে দেশে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে। পাশাপাশি স্থগিত থাকা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি পুনর্বহালে আগের দাবিও উত্থাপন করবে ঢাকা। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করা তাদের কোম্পানিগুলোর মুনাফা নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ ও দ্রুত হোক। এ ছাড়া বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি শিশুশ্রম ও মেধাস্বত্ব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা কথা বলবেন।

আগামীকাল বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) সপ্তম কাউন্সিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। টিকফা বৈঠকে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল সোমবার অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ইউএসটিআর ক্রিস্টোফার উইলসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে।

জানা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবির কারণে গত মে মাসে সে দেশ থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা দেশে আসার পর এখন ফিউমিগেশন বা পোকামাকড়মুক্ত করতে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিউমিগেশন করলেই চলে। এ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে টিকফা কাউন্সিল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় উৎপাদিত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ।

জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার আওতায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বেশ কিছু পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত। অবশ্য তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধার আওতায় ছিল না। কিন্তু ২০১২ সালে তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও পরের বছর রানা প্লাজাধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংগঠন ‘আমেরিকান অর্গানাইজেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (এএফএল-সিআইও) আবেদনে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়।

বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার সময় ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যা বাস্তবায়িত হলে জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলা হয়। কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত শর্ত ছিল– বাংলাদেশে শ্রমমান উন্নয়ন, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা, শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার ও বাবুল আক্তারের সংগঠনের নিবন্ধন পুনবর্হাল, আমিনুল হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করা ইত্যাদি।

এসব শর্ত পূরণের দাবি করে ২০১৫ সাল থেকে টিকফা বৈঠক, পার্টনারশিপ ডায়ালগসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন আলোচনায় বাংলাদেশ জিএসপি পুনবর্হালের দাবি করলেও তাতে সম্মতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। টিকফার আসন্ন বৈঠকে আবারও জিএসপি পুনবর্হালের দাবি জানানো হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জিএসপি পুনর্বহাল হলেও আগের মতো তৈরি পোশাক এর আওতার বাইরে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আলাদা করে সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় উৎপাদিত পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে মেধাস্বত্ব অধিকার, মানসম্পন্ন সনদ অবকাঠামোর জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, প্রস্তাবিত ডাটা সুরক্ষা আইন, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফডিএ) বাংলাদেশি ওষুধ নিবন্ধন পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানিতে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে যৌক্তিকভাবেই সে দেশের তুলায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে। একই সঙ্গে জিএসপি পুনবর্হালের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যাবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র তাদের এজেন্ডা বাংলাদেশে ব্যবসারত তাদের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ নিজেদের দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়টি রেখেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বীজ রপ্তানি করতে চায় দেশটি। এ জন্য দেশটির বীজ আইন নিয়ে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে শ্রমিক অধিকার, শ্রম সংগঠন করার স্বাধীনতা, কারখানায় নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, শিশুশ্রম, মেধাস্বত্ব ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, জিএসপি ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জোর দাবি উপস্থাপন করতে হবে। এ জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশই পূরণ করা হয়েছে। জিএসপি পুনবর্হাল না করায় ব্যবসা-বাণিজ্যে যেসব সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। কারণ তৈরি পোশাক জিএসপির আওতামুক্ত হলেও রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে জিএসপি ফিরে পাওয়া দরকার।

মেসবাহুল হক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.