শ্রমজীবীর সস্তা আমিষ একটি ডিমের দাম এখন ১৪-১৫ টাকা। এটাই প্রমাণ করে, পোশাকশ্রমিকসহ দেশের শ্রমজীবী মানুষের বেহাল জীবনের কথা। চার সদস্যর একটি পরিবার যদি দিনে একটি করে ডিম খেতে চায়, তাহলে মাসে দরকার ১ হাজার ৮০০ টাকা, যা তাঁদের সাধ্যের বাইরে। গত পাঁচ বছরে দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ৮ হাজার টাকা মজুরিতে চলা এখন অসম্ভব।
আজ শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে সাভারের আশুলিয়ায় ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি আশুলিয়া শাখা আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। শেষে একই স্থান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি আশুলিয়ার বগাবাড়ি এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করা, বেতনের শতকরা ৬৫ শতাংশ মূল বেতন, প্রতিবছর মূল মজুরির ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট প্রদান, মজুরি কাঠামোতে গ্রেড সংখ্যা সাতটি থেকে কমিয়ে পাঁচটিতে নামিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। আয়োজক সংগঠনের আশুলিয়া শাখার সভাপতি জিয়াদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, গণসংহতি আন্দোলনের সহসমন্বয়ক রোকুনুজ্জামান, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ধারকর্জ, কম পুষ্টিকর খাবার, সন্তানের শিক্ষা ও মৌলিক চাহিদার নানা দিক কাটছাঁট করেও শ্রমিকেরা বর্তমান বাজারে আর চলতে পারছেন না। একদিকে কম পুষ্টি, অন্যদিকে কারখানায় অধিক পরিশ্রমে তাঁরা রোগশোকে ভুগছেন। এই মুহূর্তে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করা সময়ের দাবি। সমাবেশে সরকারি তথ্যানুযায়ী, মালিকদের যে হারে রপ্তানি ও আয় বাড়ছে, তাতে ২৫ হাজারের মজুরি প্রদান তাঁদের সামর্থ্যের মধ্যেই পড়ে। তবু নতুন মজুরি ঘোষণায় দেরি কেন, প্রশ্ন রাখেন বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় একজন শ্রমিকের পরিবার নিয়ে চলতে কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা দরকার বলা হচ্ছে। তবু শিল্প ও দেশের সামর্থ্য বিচারে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবি উঠেছে। কোনোমতে খেয়ে-পরে, ভাত-কাপড়ে বাঁচতেই পোশাকশ্রমিকের ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন।
শ্রমিকনেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি কর্মচারীর সর্বনিম্ন পদে বেতন প্রায় ১৬ হাজার ৯৫০ টাকা (২০১৫), ব্যাংকের সর্বনিম্ন পদ বা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বেতন ২৪ হাজার টাকা (২০২২), স মিলের শ্রমিকের বেতন ১৭ হাজার ৯০০ টাকা, জাহাজভাঙা শ্রমিকের ১৬ হাজার টাকা। তাই রপ্তানির শীর্ষ খাতের কারিগর পোশাকশ্রমিকদের কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা মজুরি দিতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের সস্তা মজুরের পরিচয় ঘোচাতে হবে। মালিকদের গত বছরের তুলনায় শতকরা ১০ শতাংশ বেশি আয় বেড়েছে। সরকারি তথ্যে মালিকদের আয় বৃদ্ধিকে তখনই সাধুবাদ দেওয়া যাবে, যখন শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে মজুরি ২৫ হাজারে উন্নীত হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকট ও নির্বাচনকেন্দ্রিক জাতীয় রাজনীতির জটিল সময় শ্রমিকদের মজুরি কোনোভাবেই কম করা যাবে না।