এক কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কাপড়ের দোকান দিয়েছিলেন মাহমুদা খাতুন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর মাহমুদা দোকান থেকে পুড়ে যাওয়া শাড়ি, থ্রি-পিস ও অন্যান্য কাপড়চোপড় বের করার চেষ্টা করেন। এ সময় আহাজারি করে বলেন, স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এখন ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, সংসারই–বা চালাবেন কী করে। তিনি নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
শুধু মাহমুদাই নন, আগুনে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে তাঁর মতো অনেক ব্যবসায়ীর দোকানের সবকিছু পুড়ে গেছে। আজ ভোররাতে মার্কেটের একটি দোকান থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিন্তু ততক্ষণে মার্কেটের দুই শতাধিক দোকান পুড়ে শেষ।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর মালামাল অক্ষত আছে কি না, তা দেখতে ব্যবসায়ীরা যে যাঁর দোকানে যান। গিয়ে দেখেন, সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তোলা দোকানের জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। সেসব জিনিস বের করে মার্কেটের সামনে স্তূপ করে রেখেছেন।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা মার্কেটের সামনে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে নিজেদের দোকানগুলো পুড়তে দেখে কাঁদছেন।
এ সময় মাহমুদা খাতুন বলেন, আগে ফার্মগেটে তাঁর দোকান ছিল। দুই বছর আগে বিভিন্নজনের কাছ থেকে এক কোটি টাকার মতো ঋণ নিয়ে কৃষি মার্কেটে শাড়ি, থ্রি-পিস, হিজাব ও ওড়নার ব্যবসা শুরু করেন। তিনি শেখেরটেকের ১১ নম্বর রোডের একটি বাসায় থাকেন।
মাহমুদার ভাষ্য, আগুন লাগার খবর পেয়ে সকাল সাতটার দিকে তিনি মার্কেটে এসে পশ্চিম প্রান্তে তাঁর দোকানের সামনে দাঁড়ান। তখন দক্ষিণ প্রান্তের দোকানগুলোয় আগুন জ্বলতে দেখেন। তাঁর দোকানে তখনো আগুন ছড়ায়নি। কিন্তু পানি শেষ হয়েছে বলে কিছুক্ষণ আগুন নেভানো বন্ধ রাখে ফায়ার সার্ভিস। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে তাঁর দোকানেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তখন চোখের সামনে সারা জীবনের সঞ্চয় পুড়ে যেতে দেখলেও আহাজারি করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।
মাহমুদা বলেন, ‘স্বামী অনেক দিন ধরে অসুস্থ। এই দোকান দিয়ে বহু কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছিলাম। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে পাওনাদারদের কাছে অপমানিত হচ্ছিলাম। উপায়ান্ত না দেখে ঋণ পরিশোধ করতে ছেলেকেও ইতালি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও ছেলে কাজ পায়নি। এরই মধ্যে একমাত্র আয়ের অবলম্বন দোকানটি পুড়ে গেল।’ এখন ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, কীভাবেই–বা সংসার চালাবেন, তা নিয়ে দিশাহারা তিনি।
মার্কেটে ক্রোকারিজ দোকান আছে দেলোয়ার হোসেনের। আগুন লাগার খবর পেয়ে দেলোয়ার তাঁর স্ত্রী রাশিদা আক্তারকে নিয়ে ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে।
রাশিদা আক্তার বলেন, চোখের সামনে তিনটি দোকান পুড়তে দেখে তাঁর স্বামী অসুস্থ হয়ে গেছেন। পোড়া মালামাল বের করার সময় রাশিদা আহাজারি করে বলছিলেন, কয়েক দিন আগে দোকানে ১৫ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন, তা বিক্রিও হয়নি। এর মধ্যেই সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেল।
মার্কেটের আরিসা জুয়েলার্সের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন আহাজারি করে বলেন, তাঁর দোকানের তিন কোটি টাকার সোনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি এখন পথে বসে গেছেন।