পেঁয়াজ কেনাবেচার তথ্য গোপন, নিয়ন্ত্রণে আসছে না দাম

0
139
পেঁয়াজ, রসুন ও আদা। তিন মসলার দামই বাড়তি

আল মদিনা স্টোর দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান। পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৮ টাকা দরে বিক্রি করছে তারা। ওই পেঁয়াজ কত টাকা দরে কেনা, তার কোনো কাগজপত্র নেই তাদের হাতে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. কাশেম বলেন, ‘আমরা কমিশনে ব্যবসা করি। স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও ব্যাপারীরা পেঁয়াজ সরবরাহ করেন। তারা কোনো রসিদ দেন না।’

বাজারের কাঁচা পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান কাজী স্টোরে গিয়ে জানা যায়, তারাও একইভাবে ব্যবসা করছে। পেঁয়াজ আমদানির কোনো রসিদ তাদের কাছে নেই। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘এখানে ব্যবসায়ীরা অল্প কয়েক টাকা লাভে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। তাই রসিদ বা ভাউচার থাকে না।’

তবে বাজার-সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পণ্য কেনার রসিদ না রাখা খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের একটি কৌশল। পেঁয়াজসহ বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানির রসিদ না রেখে কেউ কেউ চড়া দামে তা বিক্রি করেন। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, কত টাকায় পেঁয়াজ আমদানি এবং কত টাকায় তা বিক্রি– এই দুই তথ্য গোপন করে খাতুনগঞ্জে ‘পেপারলেস ব্ল্যাক মার্কেট’ (রসিদবিহীন কালোবাজার) তৈরি করেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাদের এই কারসাজিতে নিয়ন্ত্রণে আসছে না পেঁয়াজের বাজার।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি মোকামে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। খুচরায় এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। একটু ভালো মানের পেঁয়াজের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ আসে মূলত হিলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে।

আল মদিনা স্টোর, গাউছিয়া ট্রেডার্স, মেসার্স ছগির স্টোরসহ বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ওই তিন স্থলবন্দর থেকে পেঁয়াজ এনে আড়তে রাখে। একসঙ্গে কয়েকশ ট্রাক পেঁয়াজ আড়তে তোলে। এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র বা রসিদ তারা রাখে না, ক্রেতাদেরও রসিদ দেয় না।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘‘স্থলবন্দর দিয়ে আনা শত শত টন পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে বিক্রি করা হলেও এ-সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলছে না। অসাধু
ব্যবসায়ীরা এখানে ‘রসিদবিহীন কালোবাজার’ তৈরি করেছেন। এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি।

এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। মূল হোতা শনাক্ত করতে প্রয়োজনে স্থলবন্দরেও অভিযান চালানো হবে।’’

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের বেশ কিছু মোকামে অভিযান চালিয়ে পেঁয়াজ কেনাবেচার রসিদ মেলেনি। কেনা ও বেচার দরে বড় অসংগতি রয়েছে। প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে অসাধু ব্যবসায়ীরা রসিদ রাখছেন না।’ এমন ঘটনায় এরই মধ্যে কয়েক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পেঁয়াজ কেনার রসিদ না থাকা প্রসঙ্গে আল মদিনা স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. কাশেম বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই, কারণ স্থলবন্দরের আমদানিকারক, আড়তদার ও ব্যাপারীরা রসিদ দেন না। অথচ  আমাদেরই জরিমানা গুনতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘কারসাজি করলে মধ্যস্বত্বভোগীরা করে, আমরা করি না।’ একই কথা বলেন কাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইকবাল। তিনি বলেন, ‘কারসাজি করলে স্থলবন্দরের বড় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা করতে পারেন; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’

ভারত সরকার গত ১৯ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর পর থেকে দেশে পেঁয়াজের বাজার চড়া। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘সরকার ৯টি দেশ থেকে পেঁয়াজের আমদানির অনুমতি দেওয়ায় প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তার পরও পেঁয়াজের দাম নাগালের বাইরে। এর মধ্যে যে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে সেটা স্পষ্ট। তাদের কারসাজিতেই ভোক্তারা ঠকছে।’ এই কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.