বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মানছে না সিটি করপোরেশন

ডেঙ্গু পরিস্থিতি

0
186
ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী

সরকার স্বীকার না করলেও এ কথা ঠিক, ডেঙ্গু দেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। এডিস মশা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিকভাবে কমে না এলে এই মহামারি ঠেকানো কঠিন। এ জন্য আগেই ব্যাপকভাবে মশা নিধন দরকার ছিল; কিন্তু তা হয়নি।

তাছাড়া, সিটি করপোরেশন যেভাবে মশা নিধন করছে, তা সঠিক পদ্ধতি নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মশা নিধনে যে পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে, সিটি করপোরেশন তা মানছে না। সচেতনতা বাড়াতে রিকশার ওপর মশার ছবি বসিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ আরও ভীত হয়ে পড়ছে। কীটতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাও গ্রহণ করা হয়নি।

এডিস মশা এখন লার্ভা অবস্থায় নেই, পূর্ণাঙ্গ মশা হয়ে ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করছে। তাই এখন শুধু লার্ভা ধ্বংস করে হবে না। কিন্তু সিটি করপোরেশন তার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেখানেও তারা সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করছে না। লার্ভা শনাক্তের নামে যা করছে তাও ভুল। একটি মশা লার্ভা থাকা অবস্থায় পুরুষ না নারী, এডিস না কিউলেক্স– সেটি তারা কীভাবে নির্ণয় করছেন? এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন, আইইডিসিআর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যারা দায়িত্বে আছেন তারা যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না। মশা নিধনে যাদের গবেষণা অর্থাৎ কীটতত্ত্ববিদ, তাদের এই কাজে রাখা হয়নি। চিকিৎসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। তারা মশা নিয়ে একেক সময় একেক কথা বলছেন। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা কখনও ড্রেনে গাপ্পি মাছ ছাড়ছেন, ফড়িং ওড়াচ্ছেন, কখনও বা হাঁস-মুরগি ছাড়ছেন। এতে অর্থের অপচয় আর হাসির খোড়াক হচ্ছে।

জার্মানি, ফ্রান্স ও আমেরিকার মিয়ামি শহরে এডিস মশা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন নেই। কিন্তু অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও মেয়র ইউেরাপ-আমেরিকা যাচ্ছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশা মারতে বিটিআই আনল। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠান করে সেই বিটিআই ব্যবহার উদ্বোধন করলেন; কিন্তু বিটিআইর নামে যে ভুয়া কীটনাশক আনা হলো সেটি নিয়ে কোনো কথা বললেন না। তদন্ত কমিটিও হলো না। আসলে সিটি করপোরেশন ও মন্ত্রণালয়ে মশক নিধনের নামে দুর্নীতি হচ্ছে। এসব খতিয়ে দেখা দরকার।

ডব্লিউএইচও লার্ভিসাইডিংয়ের চেয়ে এডাল্টিসাইডিংয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন ফগার মেশিন দিয়ে যেভাবে মশা মারছে এতে মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পূর্ণাঙ্গ মশা মারা পড়ছে। একদিকে ফগিং করলে আরেকদিকে উড়ে যাচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে ৯৫ শতাংশ মশা নিধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মশা নিধনে আল্টা লো ভলিয়ম (ইউএলভি) পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। পানির সঙ্গে পরিমাণ মতো কীটনাশক মেশাতে হবে। আর ট্রাকে মেশিন বসিয়ে বৃত্ত আকারে ছিটাতে হবে। এতে কুয়াশার মতো ওষুধ সবখানে ছড়িয়ে যাবে। যেহেতু সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় মশা কামড় দেয় বেশি, তাই এ সময়ে ফগিং করতে হবে। তবে এ কাজে যে ধরনের যন্ত্রপাতি দরকার তা সিটি করপোরেশনের নেই।

দেশের মানুষকেই এখন ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে বড় ভূমিকা নিতে হবে। দিনরাতে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। ফুলহাতা জামা পরতে হবে। সকাল-বিকেল ঘরের মধ্যে ও আশপাশে অ্যারোসল ছিটাতে হবে। বাড়ির আশপাশে কোথাও যেন পানি না জমে। শিশুদের ওপর বেশি নজর রাখতে হবে।

লেখক : ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, কীটতত্ত্ববিদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.