ভারতের সূর্যাভিযান শুরু হচ্ছে আজ

0
176
ইসরোর তৈরি ভারতের প্রথম স্পেস অবজারভেটরি স্যাটেলাইট। ছবি-সংগৃহীত

চন্দ্রজয়ের সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতে এবার সূর্য গবেষণার জন্য স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে ভারত। সূর্যের আরও কাছ থেকে নজরদারি চালাতে শনিবার রকেটে করে পৃথিবী ছাড়বে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তৈরি ভারতের প্রথম স্পেস অবজারভেটরি স্যাটেলাইট। সংস্কৃত ভাষায় সূর্যের নাম আদিত্য। তাই এই স্যাটেলাইটের নাম রাখা হয়েছে আদিত্য এল১।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, আদিত্য এল১ স্যাটেলাইট যে রকেটটিতে করে মহাকাশে যাবে তাকে ইতোমধ্যে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোরের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাডে স্থাপন করা হয়েছে। মূলত পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্যাল বা পিএসএলভি রকেটের সাহায্যে আদিত্যকে মহাকাশে পাঠাবে ইসরো।

শুক্রবার রাত থেকেই পিএসএলভি-সি ৫৭ রকেটটি উৎক্ষেপণের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরোপ্রধান এস সোমনাথ। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ শনিবার ভারতীয় সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে রকেটটি রওনা হবে মহাকাশের পথে। আদিত্যের এর এই যাত্রা সরাসরি সম্প্রচার করবে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম। এ ছাড়া ইসরোর ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেলেও উৎক্ষেপণের লাইভ ভিডিও সম্প্রচারিত হবে।

ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানান, উৎক্ষেপণের পর আদিত্যকে প্রথমে পৃথিবীর কাছের কোনো কক্ষপথ বা লো-আর্থ অরবিটে রাখা হবে। সেখান থেকে পিএসএলভি রকেটে রাখা অন-বোর্ড প্রোপালশন প্রযুক্তির সাহায্যে আদিত্যকে নিয়ে যাওয়া হবে মহাকাশের ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট বা এল১-এ। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি মহাকাশের একটি বিশেষ স্থানকে বিজ্ঞানীরা এল১ পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন। সেটা পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই অবস্থান থেকে আদিত্য কোনো বাধা বা গ্রহণ ছাড়াই নিরবচ্ছিন্নভাবে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

জানা গেছে, ইতালির গণিতবিদ, পদার্থ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিউসিপ্পে লুইগি ল্যাগ্রাঞ্জার নামানুসারে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি মহাকাশের এই বিশেষ এলাকাটির নামকরণ হয়েছে। জিউসিপ্পে লুইগি ল্যাগ্রাঞ্জা দেখিয়েছিলেন, মহাশূন্যে এমন পাঁচটি পয়েন্ট রয়েছে যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর বিপরীতমুখী আকর্ষণের ফলে বস্তু ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ভেসে থাকতে পারে। আদিত্যেরও এল১ পয়েন্টে ভেসে ভেসে নজরদারি চালাতে জ্বালানি খরচ হবে না।

ইসরো জানিয়েছে, আদিত্য স্যাটেলাইটকে এল১ রেঞ্জে বসানোর উদ্দেশ্য সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত ছিটকে বের হওয়া সৌরঝড় সম্পর্কে অধ্যয়ন এবং পৃথিবীর আবহাওয়ায় এর প্রভাব বোঝা। এ ছাড়া সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত যেসব সৌরকণা ছিটকে বের হচ্ছে, তা নিয়েও গবেষণা। এর জন্য আদিত্যে সূর্যের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য সাতটি পেলোড থাকবে। এর মাধ্যমে মহাকাশে আবহাওয়ার গতি, সূর্যের উপরি স্তরের তাপমাত্রা, সৌরঝড়, নির্গমন এবং পৃথিবীর ওপর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব বিশেষ করে ওজোন স্তর নিয়ে গবেষণা করা হবে। বিজ্ঞানীদের আশা, এই অভিযান সফল হলে পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকারক সৌর বায়ু এবং ঝড়ের তথ্যের আগাম সতর্কতা জারি সম্ভব।

গনগনে উত্তাপের কারণে এমনিতেই সূর্যের ধারেকাছে ঘেঁষা যায় না। তার পরও মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) এবং জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার এখন পর্যন্ত মোট ৯ বার সূর্যকে কেন্দ্র করে গবেষণা স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। এর মধ্যে নাসার পার্কার সোলার প্রোব এবং ইএসএর সোলার অর্বিটারই এখনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। পার্কার সোলার প্রোবের ২০২৫ সাল নাগাদ সূর্যের কেন্দ্র থেকে ৯.৮৬ সৌর ব্যাসার্ধের মধ্যে পৌঁছানোর কথা। এ ছাড়া সোলার অরবিটার সূর্য থেকে মাত্র ৩ কোটি মাইল দূরত্বে বুধের কক্ষপথের কাছাকাছি থেকে নক্ষত্রটিকে পর্যবেক্ষণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরোর আদিত্য এল১ মিশন সফল হলে ভারত সত্যিই অনন্য কৃতিত্ব গড়বে।

সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের অন্ধকারাচ্ছন্ন দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ পাঠিয়ে ভারতকে গর্বে ও আনন্দের এক অন্যরকম উপলক্ষে এনে দিয়েছিল ইসরো। চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রমে চেপে তাদের রোভার যান প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে মূল্যবান সব তথ্য পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.