শিক্ষিত নারীদের ওপর চড়াও তালেবান

0
207
আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর থেকে নারীদের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করছে, ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

‘আফগানিস্তানে তালেবান যখন নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দুয়ার বন্ধ করে দিল, তখন আমার একমাত্র আশা ছিল বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া।’

এই কথাগুলো নাতকাইয়ের (ছদ্মনাম)। বয়স ২০ বছর। গত ২৩ জুলাই বিমানবন্দরে যেতে তিনি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিদায় নেন। উদ্দেশ্য, বাইরে পড়তে যাওয়া। কিন্তু সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হলো না। তালেবান তাঁকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর বিবিসিকে এসব কথা বলেন তিনি।

নাতকাই বৃত্তি পেয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমিরাতের ধনকুবের শেখ খালাফ আহমাদ আল হাবতুর এই বৃত্তি দিয়ে থাকেন। বিবিসি জানতে পেরেছে, নাতকাই ছাড়াও এই বৃত্তি পেয়েছেন আফগানিস্তানের শতাধিক নারী। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে আফগানিস্তান ছেড়েছেন। কিন্তু অনেকেরই এই বৃত্তি নিয়ে আমিরাতে পড়তে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করেছে তালেবান। কমপক্ষে ৬০ জন নারীকে তালেবান বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে।

নাতকাই বলেন, দেশে নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন না, এমনটা জানার পরও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

নাতকাইয়ের এই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। কারণ, আফগানিস্তানে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয় দুবাইয়ে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আফগান নারীদের জন্য ওই বৃত্তি ঘোষণা করা হয়। নাতকাই সেই বৃত্তি পেয়েছিলেন। তবে স্বপ্ন পূরণ হলো না।

নাতকাই যখন এ নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন গলা ধরে আসছিল। বলেন, ‘বিমানবন্দরে তালেবান সদস্যরা যখন আমার টিকিট ও ভিসা দেখলেন তখন বললেন, শিক্ষার্থী ভিসা নিয়ে নারীরা আফগানিস্তান ত্যাগ করতে পারবেন না।’

নারীদের একা ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তালেবান। কেউ বাইরে যেতে চাইলে তাঁকে স্বামী কিংবা ভাই, কিংবা চাচা, কিংবা বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। একে বলা হচ্ছে মাহরাম। যাঁর অর্থ পুরুষ সঙ্গী। কিন্তু এই পুরুষ সঙ্গী নিয়ে গিয়েও অনেকে পার পাননি। নাতকাই বলেন, এমন পুরুষ সঙ্গী নিয়ে তিন নারী উড়োজাহাজেও উঠেছিলেন। কিন্তু নীতি ও নৈতিকতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পরে তাঁদের উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে দেন। এমন এক নারীর ভাই শামস আহমাদ (ছদ্মনাম) বলেন, ‘এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের পড়ার সুযোগ বন্ধ হওয়ার পর আমার বোনের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করেছিল দুবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি। সে আশা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছিল। কিন্তু ফিরে এসেছে চোখের জল নিয়ে। তার সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’

বৃত্তি পেয়ে নারীরা যে আমিরাতে যেতে পারছেন না, তা নিশ্চিত করেছে দুবাই বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৃত্তি প্রদানকারী ওই ধনকুবের আল হাবতুর। এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও বার্তা দিয়ে আল হাবতুর তালেবান সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিথার বার বলেন, তালেবান ইতিমধ্যে নারী ও মেয়েশিশুদের পড়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর নতুন পদক্ষেপ ভয়ংকর। তালেবানের নিষ্ঠুরতার নতুন ধাপ হলো নারীদের বাইরে পড়তে যেতে না দেওয়া।

বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.