দেশের ফুটবল থেকে কি সরে যাচ্ছেন জামাল

0
185

‘এখানে আসতে পেরে আমি খুব গর্ববোধ করছি’– সুদূর আর্জেন্টিনা থেকে হোয়াটসঅ্যাপে জামাল ভূঁইয়ার এ মন্তব্যেই ফুটে উঠেছে তাঁর ভালোলাগার অনুভূতি। আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের ক্লাব সোল দ্য মায়োর হয়ে আগামীকাল অভিষেক হওয়ার কথা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়কের। ম্যাচটি দেখার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তদের জানিয়ে রেখেছেন তিনি। হোক না তৃতীয় বিভাগের ক্লাব; লিওনেল মেসির দেশের কোনো দলে খেলতে পারাটা জামালের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে জামাল ভূঁইয়ার আর্জেন্টিনার ক্লাবটিতে যোগ দেওয়াটা ইঙ্গিত দিচ্ছে অন্য কিছুর।

ফিটনেস ইস্যু, দেশের ক্লাবগুলোর তাঁর প্রতি অনাগ্রহ, সোল দ্য মায়োর এ বছরের খেলার সূচির সঙ্গে কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশের ম্যাচ, আগের মতো দলে অপরিহার্য নয়; সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল থেকে এ মিডফিল্ডার দূরে সরে যাচ্ছেন কিনা, তা নিয়েও ফুটবলাঙ্গনে উঠেছে প্রশ্ন।

শুধু তাই নয়, জাতীয় দলের ব্যস্ততার সময় সাড়ে ৫ লাখ টাকায় বিমান টিকিট কেটে আর্জেন্টিনা থেকে জামালকে সবসময় ঢাকায় আনবে কিনা বাফুফে, তা নিয়েও অনেকে সন্দিহান। সেটা করতে গেলে ফিফা উইন্ডোসহ অন্যান্য ম্যাচে তাঁর পেছনেই বিমান টিকিট বাবদ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ব্যয় করতে হবে ৩০ লাখের বেশি টাকা। আর দু’দিনের ভ্রমণ ক্লান্তি কাটিয়ে লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠে নেমে নিজেকে কতটা মেলে ধরতে পারবেন জামাল, সেটা নিয়েও চলছে আলোচনা। কারণ সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগে মাত্র চারটি ম্যাচে ফুল টাইম খেলেছিলেন ডেনমার্কপ্রবাসী এ ফুটবলার।

আগের মতো পারফরম্যান্স না থাকায় এ মৌসুমে তো কোনো ক্লাবই তাঁকে নিতে চায়নি। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী নিজ উদ্যোগেই ক্লাবের পেপারে দাম কমিয়ে চুক্তি করে ছুটিতে যান জামাল। যদিও শেখ রাসেলের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি বারবার অস্বীকার করেছেন তিনি। বর্তমানে দেশের ক্লাবে তাঁর চাহিদা কম, সোল দ্য মায়োর সঙ্গে ১৫ মাসের চুক্তি শেষে ঢাকার ফুটবলে ফিরতে চাইলেও সেটা বাস্তবে কঠিন ৩৩ বছর বয়সী এ ফুটবলারের জন্য। আর জাতীয় দলেও জামালের গুরুত্ব আগের মতো নেই।

সর্বশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের কোনো ম্যাচেই পুরো ৯০ মিনিট খেলতে না পারা জামালের প্রতি কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার আস্থাও কমে যাচ্ছে। চীনের হ্যাংঝুতে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান গেমস ফুটবলে জামাল ভূঁইয়ার বিকল্পও চেয়েছে ফেডারেশন। তাঁর সঙ্গে মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও তাজ উদ্দিনের বিকল্প হিসেবে রহমত, হৃদয় ও পাপন সিংহকে অন্তর্ভুক্তির জন্য বিওএতে চিঠি দিয়েছে বাফুফে। মূলত সোল দ্য মায়োতে যোগ দেওয়ার কারণেই জামালকে এশিয়াডে পাচ্ছে না জাতীয় দল।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে ২৮ আগস্ট ঢাকার বিমানে ওঠার কথা জামালের। ভ্রমণের সময় দু’দিন হলে বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ৩০ তারিখে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জাতীয় দলের ম্যাচ ৪ সেপ্টেম্বর। ক্লান্ত হয়ে এসে জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দিয়ে অনুশীলন করা আর ম্যাচের দিন মাঠে নামা সহজ নয়। বাংলাদেশে রিকোভারি প্রক্রিয়া অন্য দেশগুলোর মতো আধুনিক নয়। এখানেও তাঁর দ্রুত মাঠে ফেরার পথে বড় বাধা।

নিয়ম অনুযায়ী, ফিফা উইন্ডোতে ম্যাচের ৭২ ঘণ্টা আগে ফুটবলারকে ছাড়তে হয় ক্লাবগুলোর। বহির্বিশ্বের হিসেবে এ বিষয়টি আলাদা। ইউরোপিয়ান ফুটবলে জাতীয় দলের ক্যাম্প শুধু ফিফা উইন্ডোতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জাতীয় দলের ম্যাচের আগে প্রায় ২০-২৫ দিন আগে ক্যাম্প শুরু হয়। সে ক্ষেত্রে শুরু থেকে জামালকে পাবে না কোচ। এবারই যেমন এমনটি হতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই বিষয়টি নিয়েই ভাবতে হবে জাতীয় দলের কোচকে। এরই মধ্যে জামাল ভূঁইয়াকে নিয়ে ভাবাও শুরু করে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

বাংলাদেশে এলে তাঁর সঙ্গে এ বিষয়গুলো নিয়ে কোচ এবং কর্মকর্তারা বসবেন বলে জানিয়েছেন বাফুফের এক সদস্য, ‘জামালের বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনও পরিষ্কার হতে পারছি না। সে ঢাকায় এলে তার পর বুঝতে পারব, আমরা তাকে সামনে ঠিকমতো পাব কিনা।’

টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যদি আলোচনাটা ইতিবাচক না হয়, তাহলে হয়তো শেষ হয়ে যেতে পারে জামালের বাংলাদেশ অধ্যায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.