চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫০০ ছাড়িয়েছে। সারা দেশে অনেকেই আক্রান্ত ডেঙ্গু জ্বরে। বাদ নেই বিনোদন অঙ্গনের তারকারাও। এই যেমন শিশু চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পাওয়া সিমরিন লুবাবা জ্বরে কাবু। ফেসবুকে সারাক্ষণ হাসিখুশি ছবি পোস্ট করা এই খুদে অভিনেত্রী জ্বরে আক্রান্ত একটি ছবি পোস্ট করে দোয়া চেয়েছেন। খবর নিয়ে জানা যায়, লুবাবার মতো জ্বর ছাড়াও ডেঙ্গুতে কাবু বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পী, পরিচালক। কেউ এখনো ভুগছেন, কেউ জ্বর থেকে সেরে উঠলেও কাজে ফিরতে পারছেন না।
গতকাল বুধবার বিদ্যালয় থেকে ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে সিমরিন লুবাবা। খুদে এই অভিনয়শিল্পী প্রয়াত অভিনেতা আবদুল কাদেরের নাতনি। দুপুরের পর থেকে জ্বর সহ্যসীমার বাইরে চলে যায়। প্রথম দিকে ১০০ ডিগ্রি হলেও সেটা বেড়ে রাতে ১০৪ ডিগ্রি হয়। এখনো জ্বরের ঘোরেই রয়েছে এই খুদে অভিনেত্রী। তার মা জাহিদা ইসলাম বলেন, ‘কাল রাত থেকে মেয়ের অবস্থা ভালো নয়। এখনো খারাপ। গায়ে, পিঠে, ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা। একই সঙ্গে মাথায় ব্যথা ও ভার হয়ে আছে। কিছুটা কাশিও আছে। এখন ডেঙ্গু কি না, বুঝছি না। ওকে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে। আজ টেস্ট করাব। সব মিলে ভয় লাগছে।’ সিমরিন লুবাবা দাদার হাত ধরেই অভিনয়ে এসেছিল। সেই লুবাবা এখন নাটক, সিনেমায় অভিনয় করে।
তিন দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাহনুর। কোনোভাবেই জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। ধারণা করছিলেন, ডেঙ্গু হতে পারে। পরে গত সোমবার তিনি হাসপাতালে গিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করান। ২৪ ঘণ্টা পর এই অভিনেত্রী জানতে পারেন, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। সেই খবর তিনি ফেসবুকে ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে লিখেছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমিও ডেঙ্গু পজিটিভ।’ বর্তমানে তিনি বাসাতেই চিকিৎসকের পরামর্শে বিশ্রামে আছেন।
নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা পল্লবও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। বর্তমানে তিনি ঢাকার আদাবরের বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। চার দিন আগে এই অভিনেতা বলেন, ‘সারা শরীরে এত ব্যথা, বলে বোঝাতে পারব না। ওরে জ্বর, এত বছরের জীবনে কোনো দিন এতটা কষ্ট পাইনি। হাসপাতালে যাবতীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে বাসায় থেকে চিকিৎসা চলছে।’
রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ফারহিন খান জয়িতাকে জ্বর যেন একেবারেই কাহিল করে দিয়েছে। টানা আট দিনের বেশি সময় তিনি জ্বরে ভুগছেন। ২২ আগস্ট ফেসবুকে লেখেন, ‘তিন–চার দিন জ্বর থাকল। ডেঙ্গু, সিবিসি টেস্ট করালাম। ডেঙ্গু হয়নি। সিবিসির রিপোর্ট ভালো।’ তিনি বলেন, ‘আট দিন আমি জ্বর, দুর্বলতার জন্য সোজা হয়ে উঠতে পারছিলাম না। প্রচণ্ড খারাপ লাগা নিয়ে সারাক্ষণ ছিলাম। এটা ব্যাখ্যা করার মতো নয়। আমার আশপাশে অনেকেরই হচ্ছে, মোটামুটি সবারই একই অবস্থা ছিল। খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এখন আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো আছি।’
এ দিকে নাট্যপরিচালক গাজী আপেল মাহমুদ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা কিছুটা খারাপ হওয়ায় রক্তের প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ। আপেল বলেন, ‘আমার রক্তের প্লাটিলেট অনেক কমে গিয়েছিল। শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছিল। এখন ব্লাড দেওয়ার পর কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে।’
আরেক নাট্যপরিচালক রানা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমি কিছুদিন ধরে অসুস্থ। কিডনি, লিভার, রক্ত, মেরুদণ্ড, ডায়াবেটিসসহ বেশ কিছু পরীক্ষা করিয়েছি। সবই ভালো, কিন্তু আটকে গেলাম ডেঙ্গুতে। প্রথম কয়েক দিন প্রচণ্ড মাথাব্যথা, জ্বর মোটেই কমছে না, বমি ও কাশি ভাব প্রায় সময়ই ছিল। এখন কিছুটা ভালো।’
কলাকুশলীদের মধ্যেও ডেঙ্গুতে কেউ কেউ পরিবার–পরিজন হারিয়েছেন। খ্যাতিমান সিনেমাটোগ্রাফার রাশেদ জামানের প্রধান ক্যামেরা সহকারী মনিরুজ্জামান একমাত্র সন্তানকে ডেঙ্গুতে হারান। জুলাই মাসে মনিরুজ্জামানের সন্তান মারা যায়। তার দুই দিন আগেও সেই ছেলে হাসপাতালে বাবাকে বলেছিল, সে বাসায় যেতে চায়। তার বাসায় ফেরা হয়নি। পরে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি।
জুলাই মাসে গায়ক সাব্বির হোসেনের ছেলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। টানা আট দিন পরে জ্বর থেকে সেরে ওঠে। ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ সিনেমার পরিচালক রায়হান জুয়েল দীর্ঘ একটা সময় মেয়েকে নিয়ে ভুগেছেন। মেয়ে এখন সুস্থ।
অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্যদের মধ্যে আহসান হাবীব নাসিম, রওনক হাসান, সাজু খাদেমসহ অনেকেই জ্বরে কাহিল। নাসিম বলেন, ‘আমার জ্বর এক দিন ছিল। এখন পাঁচ কি ছয় দিন ধরে পুরো শরীর ব্যথা। সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্বলতা।’ রওনকের সঙ্গে কথা হলো, তাঁরও একই অবস্থা। এভাবেই আমাদের সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।’ এর আগে অভিনেত্রী তানিয়া বৃষ্টি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাঁর জ্বর ১০২, ১০৩ ডিগ্রির নিচে নামছিল না।