প্রয়োজনে শুদ্ধি অভিযান চালাবে ছাত্রলীগ

0
132

মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে শোক জানিয়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হয়েছেন ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী, যা নিয়ে বিব্রত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ আওয়ামী লীগও। এই বহিষ্কৃতরা ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী অথবা ধর্ম নিয়ে অপপ্রচারে প্রভাবিত বলে মনে করছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে ছাত্রলীগে বৃহৎ আকারে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

সাঈদীর মৃত্যুতে শোক ইস্যুতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল পান্থ। এই তালিকা আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, গত বুধবার চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে এটি শুরু হয়। এর পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় অব্যাহতি ও বহিষ্কার চলছে। সর্বশেষ গতকাল বরিশালের উজিরপুরে বামরাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্ত, সদস্য সাইদ ফকির, গুঠিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু হাওলাদার, গুঠিয়া আইডিয়াল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তাইজুল ইসলাম ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ভাদুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ হোসেনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগের দিন শুক্রবার বহিষ্কার করা হয় যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ হোসেন, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, ইমন সরদার, উপসমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক সোহাগ শরিফ ও নিজামকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ মোল্লাকে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ায় ২১ জন, জামালপুরে ১৯, নরসিংদীতে ৯, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় এক, কাশিয়ানীতে ছয়, সাতক্ষীরায় তিন, পাবনায় সাত, ময়মনসিংহের নান্দাইলে তিন, বরিশালে চার, পটুয়াখালীর মুরাদিয়ায় এক, কক্সবাজারের পূর্ব বড় ভেওলায় তিনজনকে এখন পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়েছে। নেত্রকোনার কলমাকান্দায় কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে একজনকে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার সুযোগ আমাদের সংগঠনে নেই। আমরা ইতোমধ্যে সব সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি। প্রয়োজনে ছাত্রলীগ বৃহত্তরভাবে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করব।’

কেন এমনটি ঘটছে– এমন প্রশ্নে সাদ্দাম বলেন, ‘অনুপ্রবেশের কিছু ঘটনা ঘটেছে। আবার ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর আমাদের পবিত্র ধর্মকে হাতিয়ার করে প্রজন্মকে বিভ্রান্তের একটি চেষ্টা সব সময় থাকে। ধর্ম নিয়ে ব্যবসার রাজনীতি দিয়ে তারা দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সংক্রমিত করার চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি, ছাত্রলীগ নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সাফল্যমণ্ডিত করতে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। কিছু ঘটনা ঘটছে, আমরা তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আদর্শের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়।’

একই বিষয়ে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন কুখ্যাত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী এবং সাম্প্রদায়িক মানুষ। তাকে নিয়ে ছাত্রলীগের একজন প্রাথমিক সদস্যও যদি কথা বলে, তার ভেতরে জাতির পিতার আদর্শ বিন্দুমাত্র কাজ করছে না। আদর্শহীন, নীতিহীন সুবিধাবাদীদের বহিষ্কারের খুবই ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছাত্রলীগ।’

বাংলাদেশে মিথ্যাচারের রাজনীতি ১৯৭৫ সালের পর থেকে শুরু হয়েছে উল্লেখ করে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘এই অপসংস্কৃতির ধারাবাহিকতার ফসল হলো সাঈদীর মতো যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলা লোক দেখা যাওয়া। অনেকে মনে করে, চাঁদে সাঈদীকে দেখা যায়, ভূমিকম্প সাঈদীর মৃত্যুতে প্রভাবিত হয়। এই অপপ্রচারেও মানুষ প্রভাবিত হয়েছে। এগুলো ক্ষণিক। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে ছাত্রলীগে কিছু সুযোগসন্ধানী ও অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। এদের কেউ কেউ অনৈতিক কারণে জায়গা করে নিয়েছিল। তাই ধরা পড়লে এদের সবাইকে আমরা বের করে দিই। আমাদের নীতি-আদর্শ এখনও বজায় আছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.