নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় খুলনায় বাড়ছে প্রচারণা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করছেন। কর্মীদের মাধ্যমে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার সাঁটছেন। খুলনায় মোট ছয়টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে একটি ছাড়া পাঁচটিতে অন্তত ৩২ নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। খুলনা-১, ৫ ও ৬– এই তিনটি আসনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বর্তমান এমপিরা। দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন।
খুলনা-১ আসনের বর্তমান এমপি ও হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস ফের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডল, সংরক্ষিত আসনের এমপি গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল, দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বিনয় কৃষ্ণ রায়, সাবেক সহসভাপতি রনজিত কুমার মণ্ডল, বটিয়াঘাটা উপজেলা সভাপতি আশরাফুল আলম খান, ভারত বিচিত্রার সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নান্টু রায়, সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত রায় মনোনয়ন চাইবেন। নান্টু রায় বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘পঞ্চানন বিশ্বাস চারবার এমপি হলেও এ আসন সবচেয়ে অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত। জনগণ পরিবর্তন চাইছে। আশা করছি, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’ তবে পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন, ‘উন্নয়ন হয়েছে কিনা, মূল্যায়ন করবে জনগণ। নির্বাচনের আগে নান্টু রায়ের এমন অবস্থানে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
খুলনা-২ আসনের বর্তমান এমপি প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। এখানে এখন পর্যন্ত অন্য কারও তৎপরতা দেখা যায়নি। খুলনা-৩ আসনের এমপি শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, বর্তমান সেনাপ্রধানের বোন ও প্রয়াত যুবলীগ নেতা শহীদ ইকবাল বিথারের স্ত্রী অধ্যাপক রুনু ইকবাল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য শেখ ফারুক হাসান হিটলু মনোনয়নপ্রত্যাশী। শেখ ফারুক হাসান হিটলু বলেন, ‘বর্তমান এমপি অনেক দিন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এখন বয়স হয়েছে। এলাকার নেতাকর্মী ছাড়াও ভোটাররা নতুন নেতৃত্ব চাইছেন। দীর্ঘদিন এলাকায় গণসংযোগ করছি, দল অবশ্যই মূল্যায়ন করবে।’
খুলনা-৪ আসনে এমপি শিল্পপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী, যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, যুগ্ম সম্পাদক শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, সাবেক এমপি প্রয়াত মোস্তফা রশিদী সুজার ছেলে ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদীন রশিদী সুকর্ণ ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ মনোনয়নের আশায় এলাকায় কাজ করছেন।
শরফুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘বর্তমান এমপিকে এলাকাবাসী সব সময় কাছে পান না বলে তাদের মনে কষ্ট আছে। দল আমাকে সুযোগ দিলে নির্বাচনে হারি-জিতি সব সময় জনগণের পাশে থাকব।’ তবে আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘নিয়মিত দল ও সরকারি কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছি। যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন, সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
খুলনা-৫ আসনের এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ছাড়াও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদের জেলা সহসভাপতি মাহাবুব উল ইসলাম, গুটুদিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা সরোয়ার, ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অজয় সরকার মনোনয়নপ্রত্যাশী। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান এমপির অনেক বয়স, তিনি জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না। কর্মকাণ্ডের কারণেই নেতাকর্মীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়েছে। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থীদের বিরোধিতা করেছেন। এ নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ রয়েছে।’ তবে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘মনোনয়নপ্রত্যাশী কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি জনগণ ছাড়া কারও কাছে কৈফিয়ত দেব না।’
খুলনা-৬ আসনের এমপি শেখ মো. আকতারুজ্জামান বাবু ছাড়াও মনোনয়নের আশায় এলাকায় কাজ করছেন সাবেক এমপি সোহরাব আলী সানা, ইঞ্জিনিয়ার জি এম মাহবুবুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমার মণ্ডল, শেখ রাশেদুল ইসলাম রাসেল, বিএমএ নেতা ডা. মো. শেখ শহীদ উল্লাহ।
জি এম মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বর্তমান এমপি ঠিকাদারি কাজ এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ নিয়ে তাঁর বিষয়ে নেতাকর্মীর মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তিনি স্বজনপ্রীতি করেন। বেশির ভাগ নেতাকর্মী তাঁর বিপক্ষে। তা ছাড়া স্থানীয়রা বহিরাগত কাউকে মেনে নিতে চাইছেন না।’ আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে মনোনয়নপ্রত্যাশী কেউ কেউ গণসংযোগে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
