চীনে বন্দী নারী সাংবাদিকের ‘অস্ট্রেলিয়ার জন্য প্রেমপত্র’

0
176
চীনা-অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক চেং লেই, ফাইল ছবি: রয়টার্স

কারাগারের ছোট্ট সেলে আমি আমার সন্তানদের মিস করি। সেই সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখাটাও মিস করি। এক চিঠিতে এ কথা লিখেছেন অস্ট্রেলিয়ার নারী সাংবাদিক চেং লেই। তিনি এখন চীনে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। চিঠিতে মুক্ত জীবনের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

‘রহস্যময়’ গ্রেপ্তার ও বন্দিজীবনের তিন বছর পূর্তিতে অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এই চিঠি লিখেছেন চেং লেই। চীনে বন্দী থাকা অবস্থায় বিদেশি কোনো ব্যক্তির এভাবে চিঠি লেখাটা বেশ বিরল।

এই চিঠির মধ্য দিয়ে ক্যানবেরা ও বেইজিংয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের ওপর নতুন আলোকপাত করেছেন সাংবাদিক চেং লেই। সংবাদমাধ্যমে এই চিঠিকে ‘অস্ট্রেলিয়ার জন্য প্রেমপত্র’ বলা হচ্ছে।

চিঠিতে চেং লেখেন, ‘আমি সূর্যের আলো ভীষণ মিস করি। আমার সেলের ছোট্ট জানালা দিয়ে সূর্যের আলো এসে পৌঁছায়। কিন্তু আমি বছরে মাত্র ১০ ঘণ্টা এর নিচে দাঁড়াতে পারি।’

চেং লেই চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম সিজিটিএনের সাবেক উপস্থাপক। ২০২০ সালের আগস্টে চীনে আটক হন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চীনের রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য বিদেশিদের কাছে তুলে দিয়েছেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে এর বেশি কিছু প্রকাশ করা হয়নি। এখনো বিচার চলছে তাঁর।

কারাবাসের তিন বছর পূর্তিতে চেংয়ের লেখা এই চিঠি অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বসহ প্রকাশ-প্রচার করা হচ্ছে। চেংয়ের সঙ্গী নিক কোয়লে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এই চিঠি পোস্ট করেছেন।

চিঠিতে দুই সন্তানের জননী চেং লিখেছেন, তিন বছরের বন্দিজীবনে তিনি একটি গাছও দেখেননি। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সৈকত ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন।

চেং লিখেছেন, তিনি যে সেলে বন্দী, সেখানে একটি বিছানা আছে। ওই বিছানা বছরে একবার আলো-বাতাসে বের করা হয়। চিঠির শেষে চেং লিখেছেন, ‘আমি এখানে আমার সন্তানদের সবচেয়ে বেশি মিস করি।’

চেংয়ের এই বন্দিজীবনকে চীনা বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান লেখক ইয়াং জুনের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা যায়। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ২০১৯ সাল থেকে ইয়াং জুনে চীনে কারাবন্দী।

অন্যদিকে, ২০২০ সালের আগস্টে আটক হলেও পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে চেংকে গ্রেপ্তার দেখায় চীন। চেং নিজেকে একজন চীনা বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় বলে পরিচয় দেন।

গত মার্চে চেংয়ের গোপন বিচার শুরু হয়। এমনকি চীনে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বিচার কার্যক্রম দেখার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে চেংয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চীন-অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অনেকটাই উষ্ণ হয়ে উঠেছে। চীন বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নিয়েছে। এরপরও চেংয়ের কারাবাসের বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে অস্বস্তি রয়ে গেছে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়াং আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘চেং তাঁর সন্তানদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন, এমনটা দেখার জন্য মুখিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়াবাসী।’

বিবৃতিতে পেনি ওয়াং আরও বলেন, ‘চেংয়ের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সরকার প্রতিনিয়ত অ্যাডভোকেসি চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চেং ও তাঁর পরিবারের পাশে রয়েছি। চেংয়ের স্বার্থ ও সুস্থতার পক্ষে আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’

গত বছর চেংয়ের সঙ্গী নিক বলেছিলেন, ‘বন্দিজীবনে চেং অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে। এ কারণে চেংয়ের সুস্থতা নিয়ে আমি ভীষণ উদ্বেগে ভুগছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.