আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের ৬৮টি বেসরকারি সংস্থাকে ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা’ হিসেবে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনযোগ্য বলে নির্বাচিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ মঙ্গলবার সংস্থাগুলোর নামের তালিকা প্রকাশ করে ইসি জানিয়েছে, এই সংস্থাগুলোর বিষয়ে কোনো দাবি বা আপত্তি থাকলে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
ইসির দেওয়া তালিকায় দেখা যায়, আলোচিত–সমালোচিত দুটি সংস্থা—ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন এবার পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। এই দুটি সংস্থাও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান আবেদ আলী আর সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব তিনি। গত জাতীয় নির্বাচনে অনভিজ্ঞ কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়ে এসে সমালোচিত হয়েছিল সার্ক মানবাধিকার ফোরাম। আর এবার নির্বাচনের আগে কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে দেশে এনে ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম।
ইসি জানায়, নির্ধারিত সময়ে আসা দাবি–আপত্তিগুলো শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে। এরপর চূড়ান্তভাবে পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেওয়া হবে। চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন পাওয়া স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবে।
ইসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। ইতিমধ্যে এই সংস্থাগুলোর পাঁচ বছর মেয়াদের নিবন্ধন শেষ হয়েছে। নতুন করে নিবন্ধনের জন্য চলতি বছর ইসি আবেদন আহ্বান করে। পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সময় ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১৯৯টি সংস্থা আবেদন করে। এরপর আরও ১১টি সংস্থা আবেদন গ্রহণ করে কমিশন । ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি ২১০টি সংস্থার মধ্যে প্রাথমিক যাচাই শেষে ৯৪টি সংস্থার তালিকা নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করে। গতকাল নির্বাচন কমিশন ৬৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে। এর মধ্যে ২৯টি সংস্থা গত জাতীয় নির্বাচনের সময়ও পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত ছিল।
নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আবেদনকারী সংস্থাগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করে কমিশনে উপস্থাপন করে। কমিশন এসব তথ্য ও পর্যবেক্ষক নীতিমালা অনুসরণ করে নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে ৬৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নির্বাচিত করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ থাকে পাঁচ বছর। এই সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পায় নিবন্ধিত সংস্থাগুলো।
ইসির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব সংস্থা গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে এবং গঠনতন্ত্রে এ বিষয়সহ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে তথ্য প্রচার ও উদ্বুদ্ধ করার অঙ্গীকার রয়েছে, কেবল সেসব বেসরকারি সংস্থাই নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বা আছেন কিংবা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা সময়ের মধ্যে কোনো নির্বাচনের প্রার্থী হতে আগ্রহী কোনো ব্যক্তি যদি আবেদনকারী কোনো সংস্থার প্রধান নির্বাহী কিংবা পরিচালনা পর্ষদের বা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হয়ে থাকেন, তাহলে ওই সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না।