দেশে বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোকে। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হলেও অল্প বয়সীরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্তক্ষরণ বা রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাকেই স্ট্রোক বলা হয়।
স্ট্রোক থেকে প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত, বিকলাঙ্গতা, চিরতরে শয্যাশায়ী এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে জটিলতা কতটা তীব্র হবে, তা নির্ভর করে কত দেরিতে স্ট্রোকের রোগীর চিকিৎসা শুরু হয় তার ওপর।
স্ট্রোকের রোগীরা প্রায়ই অনেক দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছান। দেরি হলে রোগীকে সঠিক ও উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়ার আর সময় থাকে না। অথচ সময়মতো চিকিৎসা নিলে ক্ষয়ক্ষতি ও জটিলতা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। স্ট্রোকের লক্ষণ সহজে চিনতে বিশ্বব্যাপী ‘BE FAST’ (দ্রুত করুন) শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়।
ইংরেজি ‘BE FAST’ শব্দবন্ধ দিয়েই স্ট্রোকের লক্ষণ বা উপসর্গ মনে রাখা সম্ভব। যেমন—
‘বি’ অর্থ ব্যালেন্স। মাথা ঘোরানো বা শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পারা।
‘ই’ অর্থ আই বা দৃষ্টির সমস্যা। দৃষ্টি ঘোলা হয়ে আসা বা হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা।
‘এফ’ অর্থ ফেস বা মুখমণ্ডল। হঠাৎ মুখের একদিক বাঁকা হয়ে যাওয়া বা মুখমণ্ডলের অংশবিশেষ অবশ হয়ে যাওয়া।‘এ’ অর্থ আর্ম বা বাহু। হঠাৎ করে হাত দুর্বল বা অবশ হয়ে যাওয়া।‘এস’ অর্থ স্পিচ বা হঠাৎ কথা জড়িয়ে আসা বা বন্ধ হয়ে যাওয়া।‘টি’ অর্থ টাইম বা সময়। এই সময় বলতে বোঝাচ্ছে এ ধরনের কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরুরি নম্বর ১৬২৬৩ বা যেকোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রয়োজনে কাছের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে। শুরুতেই মস্তিষ্কের একটি সিটি স্ক্যান করে স্ট্রোকের ধরন বুঝতে হবে। কারণ, স্ট্রোক দুই ধরনের হয়। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ইস্কেমিক স্ট্রোক অথবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের হেমোরেজিক স্ট্রোক। দুই ক্ষেত্রে চিকিৎসাপদ্ধতিও ভিন্ন। রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে শ্বাসপ্রশ্বাস ও রক্তসঞ্চালন নিয়মিত রাখতে অক্সিজেন, শিরাপথে স্যালাইন, প্রয়োজনে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা রাখা জরুরি।
রোগীকে একদিকে কাত করে বালিশ ছাড়া মাথা নিচু করে শোয়াতে হবে। চোখের যত্ন নিতে হবে। মূত্রথলির যত্ন নিতে হবে। নইলে প্রস্রাবের সমস্যা হতে পারে। রোগী মুখে না খেতে পারলে প্রয়োজনে নাকে নলের মাধ্যমে খাবার দিতে হবে। স্ট্রোকের পর প্রতিটি মুহূর্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে মস্তিষ্কের লাখ লাখ নিউরন বাঁচানো সম্ভব।
স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, সুস্বাস্থ্যকর দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।
- ডা. মো. ফরহাদ আহমেদ, ব্রেইন, স্পাইন ও স্ট্রোক সার্জারি বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, মিরপুর