কক্সবাজার বিমানবন্দরের ৯ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের রানওয়ের উত্তর দিকে বঙ্গোপসাগর চ্যানেল ভরাট করে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত নতুন রানওয়ের নির্মাণকাজের ৭৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ অবশিষ্ট কাজ শেষ করে দিবারাত্রি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট (উড়োজাহাজ) ওঠানামা চালু সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, বর্তমান রানওয়ের উত্তর পাশে বিশাল জলরাশি ভরাট করে সেখানে দৃষ্টিনন্দন রানওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। মালয়েশিয়া থেকে আনা বড় বড় বোল্ডার পাথর ফেলে নির্মিতব্য রানওয়ের দুই পাশে প্রতিরক্ষাবলয় তৈরি করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে রানওয়ে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য বোল্ডার পাথরের ওপর বসানো হচ্ছে বড় বড় সিসি ব্লক। বিদেশি প্রকৌশলীদের পরামর্শে রানওয়ের নির্মাণকাজ চালাচ্ছেন ৪০০ জনের বেশি শ্রমিক। রাতদিন চলছে কাজ।
দেশের প্রথম সমুদ্রবক্ষের ওপর নির্মিতব্য এই রানওয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সমুদ্রে সম্প্রসারণ প্রকল্পে’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমুদ্রগর্ভে ৪৩ হেক্টর ভূমি পুনরুদ্ধার করে (ভরাটের মাধ্যমে) রানওয়ে বর্ধিত করা হচ্ছে। এতে এই রানওয়ের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট, যা হবে দেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সমুদ্রে সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের অবশিষ্ট ২২ শতাংশ কাজ শেষ করা হবে। তখন দেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ের এই কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিবারাত্রি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট (উড়োজাহাজ) ওঠানামা সম্ভব হবে। নতুন রানওয়ের পুরোটা (১ হাজার ৭০০ ফুট) অংশ থাকছে সাগরজলের ওপর। উড়োজাহাজ নামবে সাগরজল ছুঁয়ে। তখন কক্সবাজারের পর্যটনসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব থেকে রানওয়ের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নকশা অনুযায়ী সমুদ্রতীরে বাঁধ নির্মাণসহ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অপারেশনাল এলাকার চারপাশে নিরাপত্তা টহল রাস্তাও নির্মাণ করা হচ্ছে। সমুদ্রগর্ভে আরও প্রায় ২ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ‘প্রিসিশন অ্যাপ্রোচ লাইট’ স্থাপনসহ বিদ্যমান রানওয়েতে ‘ক্যাট-২ এজিএল’ সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ নিশ্চিত হবে।
গত সোমবার (২৪ জুলাই) বিমানবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিগগিরই আন্তর্জাতিক রূপ পেতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। লাইটিংসহ অবশিষ্ট কিছু কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে। ডোমেস্টিক (অভ্যন্তরীণ) টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজও শেষের পথে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে।
প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, কক্সবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক। এ কারণে কক্সবাজারে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। তিনি (শেখ হাসিনা) কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দিতে চান। তাই কক্সবাজারে আরও একটি বিমানবন্দর করা হবে। এতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ সরাসরি কক্সবাজারে আসা–যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
বেবিচক সূত্র জানায়, সাগরের পানি নিষ্কাশন করে জমি ভরাটের মতো চ্যালেঞ্জ, করোনার দুর্যোগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা সংকট মোকাবিলা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই ১ হাজার ৭০০ ফুটের রানওয়ের কাজ শেষ করা হবে। এ ছাড়া যথাসময়ে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে, বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। এখন ভবনের ভেতর ইমিগ্রেশন, বোর্ডিং পাস, লাউঞ্জের কাজ চলছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা বলেন, এখন কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দৈনিক ৪০টি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে এবং কক্সবাজার-যশোর রুটে চিংড়ি পোনা সরবরাহ দিচ্ছে ২-৩টি কার্গো বিমান। সমুদ্রজলের ওপর নতুন রানওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হলে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ সহজেই ওঠানামার সুযোগ পাবে।