নেদারল্যান্ডসে এবার সুন্দরী প্রতিযোগিতায় মিস নেদারল্যান্ডস বিজয়ী হয়েছেন ছেলে হিসেবে বেড়ে ওঠা রিকি কোলে। ২২ বছর বয়সী রিকি ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী। ডাচ বন্দর শহরে ছেলে পরিচয়ে বেড়ে ওঠা রিকি নারীতে পরিণত হয়েছেন। দেশটিতে তিনিই প্রথম রূপান্তরকামী নারী, যিনি মিস নেদারল্যান্ডস বিজয়ী হয়েছেন।
দুই সপ্তাহ আগে এক গালা অনুষ্ঠানে রিকি কোলের মাথায় মিস নেদারল্যান্ডস বিজয়ীর মুকুট পরিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় তিনি বলেন, ‘সত্যিই এটা আমার বছর। এটা আমার কাছে একটা বড় স্বীকৃতি। ৯৪ বছর পর প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে এই খেতাব জেতাটা ছিল একটা সুন্দর মুহূর্ত।’
মিস নেদারল্যান্ডস প্রতিযোগিতার আয়োজকেরা বলেন, রিকি কোলের জীবনে ‘একটি স্পষ্ট লক্ষ্যসহ শক্তিশালী একটি গল্প আছে।’
রিকি এখন আগামী নভেম্বরে এল সালভাদরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সুন্দরী প্রতিযোগিতা মিস ইউনিভার্সে নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ২০১৮ সালে স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করা অ্যাঞ্জেলা পন্সের পর রিকি হবেন এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া দ্বিতীয় ট্রান্সজেন্ডার নারী।
রিকি বলেন, ‘প্রথম ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে মিস ইউনিভার্স জেতার বড় স্বপ্ন ছিল। তবে এবার আমি কেবল অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে যাচ্ছি।’
রিকি কোলে নেদারল্যান্ডসের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ব্রেডায় বাস করেন। মিস নেদারল্যান্ডসজয়ী হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি নেতিবাচক বার্তার পাশাপাশি হুমকিও পেয়েছেন। কেউ কেউ তাঁকে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন।
এ বিষয়ে রিকি বলেন, ‘সাধারণভাবে প্রতিক্রিয়াগুলো ইতিবাচক ছিল…তবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও আছে। আমি বিশ্বাস করি, এসব বার্তা টিকে থাকবে না। আমি সুন্দর বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্ব দিতে চাই, আর এগুলো অনেক আছে।’
রিকি আরও বলেন, ‘আমি সব সময় নিজের বেছে নেওয়া পথে চলেছি। আর এটাই আমাকে এমন ব্যক্তি হতে সাহায্য করেছে, যা আমি সত্যিই হতে চেয়েছিলাম।’ তাঁর প্রত্যাশা, তিনি অন্যদের জন্য, বিশেষ করে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের তরুণদের জন্য একজন আদর্শ মানুষ হয়ে উঠবেন।
নেদারল্যান্ডসের বন্দর শহর ডেন হেল্ডারে ছেলে হিসেবে বেড়ে ওঠা খুব সহজ ছিল না রিকির জন্য। তবু মা-বাবার সমর্থন নিয়ে তিনি ১২ বছর বয়সেই বয়ঃসন্ধি প্রতিরোধের চিকিত্সা শুরু করেছিলেন। এরপর ১৬ বছর বয়সে নারী হরমোনের চিকিৎসা শুরু করেন।
রিকি বলেন, ‘আমার রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে একটি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে। অস্ত্রোপচারের পর আমি নারী হিসেবে অনুভূতি পেয়েছি, যা আমাকে মুক্তি দিয়েছে।’
গত জানুয়ারিতে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা একটি ছবি পোস্ট করে রিকি লিখেছিলেন, ‘আমি ছোট্ট রিক হিসেবে জন্মেছিলাম। কিন্তু ওই ছোট্ট রিকই রিকি হতে চেয়েছিল।’
নিজের এই রূপান্তরিত হওয়ার যাত্রা অনেক দীর্ঘ ও কঠিন ছিল জানিয়ে রিকি বলেন, ‘এই পথ কখনোই শেষ হবে না। আমি সব সময় ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে থাকব। তবে এটা এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। আমার বিশ্বাস, অন্যরাও বিষয়টি বুঝতে পারবে যে বিষয়টি স্বাভাবিক। আমরা সবাই কেবল মানুষ।’