রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দীন ও জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে স্বজনরা শেষ সাক্ষাৎ করেছেন।
মঙ্গলবার মহিউদ্দীনের স্ত্রী নুসরাত জাহান ও দুই ভাইসহ ছয়জন সাক্ষাৎ করেন। এর পর জাহাঙ্গীর আলমের পিতা, ভাইসহ ৪২ জন তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।
কখন ফাঁসি কার্যকর হবে– এ বিষয়ে কিছু জানায়নি কারা কর্তৃপক্ষ। স্বজনরা শেষ সাক্ষাৎ করায় ধারণা করা হচ্ছে, এ দিন রাতেই (মঙ্গলবার) তাদের ফাঁসি কার্যকর হতে পারে। তবে কারাগারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে তাদের ফাঁসি হবে না। ফাঁসি দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত আছেন। দু্-একদিনের মধ্যেই তা কার্যকর করা হবে।’
দু’জনের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নাকচ করার পর ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিল জাহাঙ্গীরের পরিবার। মঙ্গলবার ওই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। ফাঁসি কার্যকরের আর কোনো আইনি বাধা না থাকায় এ দিন স্বজনদের সাক্ষাৎ করতে ডাকে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে মহিউদ্দীনের পরিবারকে শেষ সাক্ষাতের সময় দেওয়া হয়েছিল। তারা বেলা ১১টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে জেল গেটে আসেন। দুপুর ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে জাহাঙ্গীরের পরিবারকে সাক্ষাতের সময় দেওয়া হয়েছিল। দুপুর ১টার দিকে তারা কারাগারে প্রবেশ করেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারা আধা ঘণ্টার মতো কথা বলার সময় পান। সাক্ষাৎ শেষে কারাগারের প্রধান ফটকে অনেক সংবাদকর্মী থাকায় তারা পেছনের ফটক দিয়ে বের হন। পরে সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হয়ে দেখা করার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই নবাব বলেন, ‘শেষ দেখা হয়েছে। ভাই কিছুই বলেননি। তার কোনো ইচ্ছে নেই, আমাদের প্রতি কোনো উপদেশও নেই।’ তাঁর ফুফু মজিরন বলেন, ‘পায়ে হাত দিয়ে মাফ চেয়েছে। আমাদের পেয়ে কান্না করেছে। বলেছে সবাই ভালো থেকো, দোয়া করো। কোনো ভুল করলে ক্ষমা করে দিও। হাত ধরে অনেক কান্না করেছে।’ জাহাঙ্গীরের বাবা অসুস্থ। স্ট্রোক করায় দীর্ঘদিন থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে আনা হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি গত ৫ জুন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। কারা বিধান অনুযায়ী চিঠি পৌঁছার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হয়। সে অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার নিজাম উদ্দীন হিরো বলেন, এ মাসের মধ্যেই যে কোনো সময় ফাঁসি কার্যকর করা হবে। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, ফাঁসি কার্যকর কখন হবে– এ বিষয়ে কোনো তথ্য তার কাছে নেই। তবে কারা কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে হাইকোর্টের আইনজীবী সেগুফতা তাবাসুম আহমেদ বলেন, রায় কার্যকর করতে আর কোনো বাধা নেই। তারা চান দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির শিক্ষকদের আবাসিক কোয়ার্টার থেকে নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের। ২ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।