কেউ মারছেন পায়ের জুতো খুলে, কেউ আবার চুলের মুঠি ধরে মারছেন হ্যাঁচকা টান, অবিরাম চলছে কিল চড় ঘুষি। উন্মত্ত জনতার মাঝে দুই মধ্যবয়সী নারীকে চলছে বেধড়ক মারধর। সুযোগ বুঝে ভিড়ের মধ্যেই টেনেহিঁচড়ে খুলে নেওয়া হলো তাদের পোশাক।এরপর নগ্ন অবস্থাতেই চলছে মারধর। হাউহাউ করে কেঁদে চলেছেন দুই নারী। পাশে দাঁড়িয়ে সিভিক পুলিশ (ভলান্টিয়ার)। কিন্তু, তাতেও কমছে না মারের দাপট।
জানা গেছে, মালদার পাকুয়াহাটে নারী নির্যাতনের এই ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার। যে ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে আজ শনিবার সকালে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে এমনভাবেই ভারতে আবারও ভয়াবহ নারী নির্যাতনের ঘটনার সামনে এলো। মণিপুরের পরে এবার পশ্চিমবঙ্গে চোর সন্দেহে দুই মধ্যবয়সী নারীকে নগ্ন করে বেধড়ক মারধরের ভিডিও ভাইরাল হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই ঘটনায় আবার নির্যাতিতা দুই নারীকেই উল্টো আটক করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে !
মাত্র ২৪ঘণ্টা আগে, শুক্রবার কলকাতায় শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে মনিপুরের ন্যাকেড প্যারেড কাণ্ডে সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনিপুরের বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্যে মমতা বলেছিলেন “বেটি বাঁচাও স্লোগান দিয়ে বেটিকে জ্বালানো হচ্ছে। মণিপুর জ্বলছে, সারা দেশ জ্বলছে। মহিলাদের ইজ্জত লুঠ করা হচ্ছে।”
মমতার এমন বক্তব্যের চব্বিশ ঘন্টা পেরোতে না পেরোতেই বেরোতেই এবার খোদ মমতার রাজ্যে প্রকাশ্য দিবালোকে নগ্ন করে দুই নারীকে বেধড়ক মারধরের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল!
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে মালদার বামোনগোলা থানার পাকুয়াহাটে। এখানেই প্রতি মঙ্গলবার হাট বসে। হাটেই দুই নারীকে পকেটমার সন্দেহে আটক করা হয়। এরপরেই শুরু হয় মারধর। উল্লেখযোগ্য বিষয়, মারধরের ঘটনায় পুরুষদের থেকে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল তুলনামূলক বেশি। ঘটনার খবর পেয়ে দু তিনজন সিভিক ভলেন্টিয়ার ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও উন্মত্ত জনতার হাত থেকে দুই নারীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে তারা ব্যর্থ হন। পরে মানিকচক থানার পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। শনিবার এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ভিডিওটি তাদের নজরে আসার পরেই তারা ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, পাকুয়াহাটে দুই নারী চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। এরপর স্থানীয় নারী ব্যবসায়ীরা চোর সন্দেহে আটক নারীদের মারধর করেছে। পরে ওই দুই নারী এলাকা ছেড়ে চলে যায় বা পালিয়ে যায়। তারা পুলিশে কোনো অভিযোগ করেনি। ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। এখন, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যদিও পুলিশের এই দাবি সম্পূর্ন খারিজ করে দিয়েছেন নির্যাতিতা একজনের মেয়ে। তার দাবি, ভুক্তভোগী দুই নারী তার মা ও চাচি। তারা হাটে লেবু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। এই সময় এক মিষ্টি বিক্রেতা তাদের চোর অপবাদ দেয়। এরপরেই তাদের বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে সিভিক পুলিশ মারফত তাদের খবর দেয়া হয় এবং মারধরের ভিডিও দেখে মা ও চাচিকে শনাক্ত করেন তিনি। এরপর থানাতে গেলে তিনি জানতে পারেন তার মা ও চাচিকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সোমবারের আগে তাদের ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
স্থানীয় শেখ গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তাঁদের কথা শুনেনি পুলিশ। যারা নির্যাতিত হয়েছে থানার পুলিশ তাদেরই আটক করেছে। পুলিশ ভুক্তভোগীদের প্রতি অন্যায় করেছে। নির্যাতিতা নারীদের দ্রুত মুক্তি এবং যারা মারধর করেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের দাবি জানান তাঁরা।