কাতার বিশ্বকাপের ক্ষতে এখনও প্রলেপ দিতে পারেননি নেইমার। সেই সময়টা যে তাঁর জন্য কতটা হতাশার ছিল, সেটাই মনে পড়ছে বারবার। কত রাত কেঁদে পার করেছেন, কত রাত দুই চোখের পাতা এক করতে পারেননি। জনপ্রিয় ব্রাজিলিয়ান ইউটিউবার ক্যাসেমিরো মিগুয়েলের কাছে সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি রোমন্থন করলেন সম্প্রতি। যার উল্লেখযোগ্য অংশ সমকাল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো–
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের কোয়ার্টার থেকে বিদায় নেওয়ার কষ্টটা আপনি হজম করতে পারেননি। মাঠেই অনেকটা কেঁদেছিলেন…
নেইমার: আসলে বিশ্বকাপের পর আমি আর ব্রাজিল দলে ফিরতে চাইনি। অনেক কিছু চিন্তা করে নতুন করে আবার ভাবতে হলো। দেখুন, দিন শেষে আমি তো সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত। তাই ওই ভাবনা পুনর্বিবেচনা করে পাল্টাতে হয়েছে। বিশ্বকাপের পর আমি আর কষ্ট পেতে চাইনি। পরিবারকে ভুগতে দেখাটাও কষ্টকর ছিল।
প্রশ্ন: সেই সময়টা কীভাবে পার করেছেন? যখন আপনি ও আপনার পরিবার অনেকটা ভুগেছে।
নেইমার: আমি টানা পাঁচ দিন কেঁদেছি। ওভাবে স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। গোলশূন্য স্কোর করে টাইব্রেকারে ম্যাচ হারব এবং কোনো গোল করব না, সেটা মেনে নিতে রাজি আছি। গোল করব, এর পর গোল হজম করে টাইব্রেকারে হারব, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। বলতে পারেন, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হারার দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে মুহূর্ত। আমার পাশে একজন কাঁদছিল, অন্যপাশে আরেকজন। গোটা দলের পরিবেশ খুব ভারী হয়ে উঠেছিল। আমি সেই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আর কখনও যেতে চাই না।
প্রশ্ন: পিএসজিতেও বাজে সময় দেখতে হলো আপনাকে। চোট পেয়ে মৌসুমের বেশির ভাগ ম্যাচ খেলতে পারলেন না…
নেইমার: হ্যাঁ, ওটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে সপ্তাহ। চোট পেয়েছিলাম। কেউ জানত না, অসুস্থও হয়ে পড়েছিলাম। সারা দিন বিছানায় থেকে চিকিৎসা করিয়েছি। বিছানার বাইরে শুধু পাই থাকত। ফিজিওথেরাপিস্ট সর্বস্ব দিয়ে চিকিৎসা করেছেন। তখন মারকিনিওস আমার পাশে ছিল, সে সঙ্গ দিয়েছে। আসলে এগুলো আর মুখে আনতে চাই না। সামনে সুন্দর সময় পার করার আশায় আছি।
প্রশ্ন: আক্রমণভাগের সেরা ত্রয়ী ছিলেন আপনারা। তার পরও কেন পিএসজিতে সফলতার দেখা পাননি?
নেইমার: আসলে আমরা সবকিছুই জিততে চেয়েছিলাম। লকার রুমে আমরা সবাই ঘনিষ্ঠ ছিলাম। ফুটবলে সব সময় সবকিছু ঠিকমতো হয় না। এটা কেক তৈরির রেসিপির মতো নয়। ফুটবল এমনই, আপনি গ্যালাকটিকোসকে (রিয়াল মাদ্রিদ) দেখুন, তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারেনি। এটা ফুটবলেরই অংশ। আমাদের খুব শক্তিশালী একটা দল ছিল। আমি, মেসি ও এমবাপ্পে– আমরা বিশ্বের সেরা তিন ফুটবলার, এটা আমরা জানি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা কার্যকর হয়নি। আমাদের জন্য যা ফল দেয়নি।
প্রশ্ন: মেসির সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা দারুণ। তিনি যে পিএসজিতে থাকবেন না, কিংবা কোথায় যাবেন সেটা কি জানতেন আপনি?
নেইমার: আমি ওর পিএসজিতে আসার বিষয়টি আগেই জেনেছিলাম। বার্সেলোনায় শেষ দুই সপ্তাহ খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটিয়েছিল মেসি। আমি ওই সময় ওকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছি, সে বার্সেলোনা ছেড়ে কোথায় যাবে। সে কিছুই বলতে পারছিল না। পরে পিএসজির সঙ্গে কথা পাকা হওয়ার পর সে আমাকে তা জানায়। মেসি প্যারিসে দুই বছর মোটেও আনন্দ নিয়ে থাকতে পারেনি।
প্রশ্ন: মেসি এখন ইউরোপের বাইরে … তার নতুন অঙ্গন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কী বলবেন?
নেইমার: আমি মেসি ও তাঁর পরিবারকে খুব ভালো করেই জানি। ওরা অন্যরকম জীবনযাপন করে। যে জায়গায় মেসি সম্মান পায়, সেখানে থাকতে সে পছন্দ করে। মায়ামিতে ওরা ভালোই থাকবে। প্যারিসে মেসির সঙ্গে গত দুই বছরটা খুব সহজ ছিল না। মেসি দারুণ একজন মানুষ। সেটা মাঠের চেয়েও মাঠের বাইরে অনেক বেশি। ব্যক্তিগত জীবনে একেবারেই অন্যরকম। আমি মায়ামিতে মেসির সাফল্য কামনা করি। সে সেখানে ভালো করুক।