বেঙ্গালুরুতে কদিন আগে জাতীয় দলের জার্সিতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আলো কেড়েছিলেন তাঁরা দুজন। ১৪ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলে এসে এবার ইস্পাহানি-আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল মাতালেন রহমত মিয়া ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিম।
দুজনই খেলেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জার্সিতে। প্রতিযোগিতাও হচ্ছে সাভারের বিরুলিয়ায় ড্যাফোডিলের ক্যাম্পাসে। ড্যাফোডিল স্বাগতিক হওয়ায় মাঠও তাদের চেনা।
সেই চেনা মাঠে ড্যাফোডিল আজ টুর্নামেন্টের ঢাকা পর্বের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে ৫-০ গোলে প্রতিবেশী ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিকে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে। একই মাঠে দিনের প্রথম ম্যাচে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৮-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিকে।
বিজিএমইএর কোচ সাবেক জাতীয় ফুটবলার রোকনুজ্জামান কাঞ্চন। ২০০৩ সালে ফাইনালে মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবার এবং একমাত্র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল। ফাইনালে কাঞ্চনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই কাঞ্চন আজ হতাশা নিয়ে ছেড়েছেন ড্যাফোডিলের মাঠ। প্রতিপক্ষ দলে শীর্ষ স্তরে ফুটবলার থাকায় পেরে ওঠেনি তাঁর দল। ফেরার আগে বড় হারের কারণটাও বলেন, ‘আমার ফুটবলাররা শীর্ষ স্তরে খেলে না। নিছকই ছাত্র। ফলে তারা পারল না। আশা করি, সামনে ভালো করব।’
কাঞ্চনের দলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জার্সিতে খেলা ঢাকা মোহামেডানের অতিরিক্ত তালিকার তরুণ ফুটবলার মইনুল ইসলাম খান।
তবে সব ছাপিয়ে জাতীয় দলের দুই ফুটবলার রহমত ও ফাহিমের উপস্থিতি টুর্নামেন্টকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তাঁদের সমর্থন দিতে ড্যাফোডিলের ছাত্রছাত্রীরা বিপুল আগ্রহ নিয়ে ম্যাচ দেখেছেন। ড্যাফোডিল পুরো দলটাই যেন শীর্ষ স্তরের ফুটবলারে ঠাসা। চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার রুস্তম ইসলাম দুখু, পুলিশের মিডফিল্ডার রাজা শেখ, গত বছর রহমতগঞ্জে খেলা মিডফিল্ডার সম্রাট রাজসহ পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরে খেলা কয়েকজন খেলেছেন আজ।
দলটির অতিরিক্ত তালিকায়ও একঝাঁক শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলার। ড্যাফোডিল আজ ১৪ জন খেলোয়াড় নিয়ে ম্যাচটা খেলেছে। বাকি ছয়জনের অন্যত্র খেলা থাকায় তাঁরা আসতে পারেননি। এই খেলোয়াড়েরা সবাই বৃত্তি নিয়ে পড়ছেন ড্যাফোডিলে।
দলটির নাম্বার নাইন মিজানুর রহমান এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তৃতীয় স্থান অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলা বাংলাদেশ পুলিশের স্ট্রাইকার। আজ বারবার চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত ম্যাচের শেষ দিকে তিনি গোলের দেখা পেয়েছেন। তাঁর গোলে হয়েছে ৫-০। জাতীয় দলের দুই তারকা রহমত ও ফাহিম করেছেন দুটি করে গোল। রহমত উইং ব্যাক হলেও খেলেছেন মাঝমাঠে। ড্যাফোডিলের অধিনায়কও তিনি।
রহমত ও ফাহিম দুজনই ছিলেন ম্যাচসেরার দাবিদার। তবে লেফট উইং দিয়ে দারুণ কিছু ঝলক দেখিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা পেয়ে যান ফাহিম। তাঁর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি। উপস্থিত ছিলেন ইস্পাহানি টি লিমিটেডের জনসংযোগ নির্বাহী সত্যজিত ঘোষ; ছিলেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ও নকশিকাঁথা ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সাজেদ ফাতেমি। পরে ফাতেমি ফুটবল নিয়ে গান গেয়ে শোনান।
ড্যাফোডিলের প্রথম ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে, টুর্নামেন্টে তারা অনেক দূর যাবে। সেই বিশ্বাস নিয়ে ইমতিয়াজ সুলতান জনি বললেন, ‘ওরা যে দেশের শীর্ষ মানের ফুটবলার, সেটা বোঝা গেছে খেলা দেখে। এতে প্রতিযোগিতার মানও বেড়েছে।’ জনি যোগ করেন, ‘প্রতিপক্ষ ইস্টার্নও ভালো খেলেছে। নইলে ড্যাফোডিল আরও বেশি গোল করতে পারত। আগামীতে নিশ্চয়ই বৃত্তির সুবিধা দিয়ে ইস্টার্ন জাতীয় স্তরের খেলোয়াড় নিয়ে আসবে এই প্রতিযোগিতায়।’
এ জন্য টুর্নামেন্টটি ধারাবাহিকভাবে আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন দ্বিতীয় মাচে সেরার পুরস্কার পাওয়া ফাহিম। তাঁর কথা, ‘এই টুর্নামেন্ট খেলে ভীষণ আনন্দিত আমি। এমন টুর্নামেন্টে আমাদের জন্য ভালো। জুনিয়রদের জন্য আরও ভালো। আশা করব, টুর্নামেন্টটি ধারাবাহিকভাবে হবে।’ রহমত ধন্যবাদ দিয়েছেন ড্যাফোডিলকে, ‘আমি একজন পেশাদার খেলোয়াড়। তার আগে আমি একজন ছাত্র। ড্যাফোডিল আমাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছে এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। ড্যাফোডিলের সব কর্মকর্তা, শিক্ষকেরা অনেক কষ্ট করেন আমাদের জন্য। আমরা খুব খুশি এই টুর্নামেন্টে খেলে।’
দিনের শেষ ম্যাচে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬–১ গোলে হারিয়েছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়।