অবশেষে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা হলো

0
192
হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮—১৯ জুলাই ২০১২)

আজ ১৯ জুলাই। ১১ বছর ধরে এই দিনটির প্রতি অপরিমেয় অভিমান নিয়ে দিনযাপন করছি। সেদিন রাতের একটি অতি অপ্রত্যাশিত খবর এলোমেলো করে দিয়েছিল সমগ্র চিন্তার জগৎ। উন্মাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম। তরুণ মনে এত বড় আঘাত এর আগে আর আসেনি। আজকাল মাঝেমধ্যে মনে প্রশ্ন জাগে, কেন এমন অঝোরে কেঁদেছিলাম? কেন এত আপন আর একান্ত নিজের কিছু হারিয়েছি বলে মনে হচ্ছিল? বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র ইহলোক ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলে? হিমু, শুভ্র, মিসির আলীর নতুন কোনো গল্প আর পাব না বলে! একজন লেখক বা তাঁর সৃষ্টি করা চরিত্রের প্রতি অপরিসীম মায়া আর আবেগের কারণই-বা কী? এসব প্রশ্নের উত্তরে অনেক কথাই মনে আসে। সব তো বলার সুযোগ নেই, তাই বরং কিশোরকালের গল্পে চলে যাই।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলের পাঠাগারে ১৭ টাকা ফি দিয়ে সদস্য হই। ‘তিন গোয়েন্দা’র বাইরে প্রথম উপন্যাস পড়ার সুযোগ দিল এই সদস্য পদ। প্রথম দিকে শরৎ (চট্টোপাধ্যায়) পড়তাম বেশি। একদিন কিছু না বুঝেই হুমায়ূন আহমেদের ‘চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক’ হাতে তুলে নিলাম। পড়া শুরু করেই বুঝলাম, এত দিন যা যা পড়েছি, তার থেকে এই বই একদম আলাদা। অন্য রকম আনন্দ নিয়ে পড়া শুরু করলেও শেষ হতে হতে অদ্ভুত বিষণ্নতায় ডুবে গেলাম। ঘোর নিয়ে পরদিন তুললাম আরেকটা বই, নাম ‘অন্যভুবন’। ‘অন্যভুবন’ আমার কিশোরী মন, চিন্তার জগৎ সবকিছুকে ভয়াবহ রকমের আন্দোলিত করে।

সেই শুরু। হুমায়ূন আহমেদের বই পেলেই গোগ্রাসে গিলি। প্রতি বইমেলার আগে লিস্টি করি—এবার প্রিয় লেখকের কী কী বই আসবে, কোনটা নিজে কিনব, কোনটা বান্ধবী কিনবে, তারপর ভাগাভাগি করে পড়ব। হিমু-শুভ্র-মিসির আলী ছাড়াও ‘লীলাবতী’, ‘অপেক্ষা’, ‘রুমালী’, ‘মধ্যাহ্ন’-এর মতো অনেক অসাধারণ বই আমরা পড়ার সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটা বই, প্রতিটি চরিত্র যেভাবে আকুল করেছে পাঠক হৃদয়, তা কবে কে পেরেছে আর! শুধু তাঁর বই-ই তো নয়, তার লেখা পড়তে পড়তে আরও কত নতুন নতুন লেখক আর বইয়ের নাম জানতে পেরেছি! অনলাইন দুনিয়ায় অনেকটা লিংক দিয়ে আরও পড়ুনের মতো, পড়েছি তাঁদের বইও। এই যে এত এত লেখকের উপন্যাস পড়েছি জীবনে, তার কৃতিত্বও তো অনেকাংশেই হুমায়ূন আহমেদের।

হুমায়ূন আহমেদের কয়েকটি বই
হুমায়ূন আহমেদের কয়েকটি বই

শুধু বইয়ের জগৎই তো নয়, এই পৃথিবীকেও তো ভিন্নরূপে দেখতে শিখিয়েছেন তিনি। তাঁর লেখায় ভরা পূর্ণিমার বর্ণনা পড়েই তো চাঁদ দেখতে শিখেছিলাম, সেই মোহ আজও আচ্ছন্ন করে রেখেছে। দুঃখ, দুর্দশা আর হতাশায় থেকেও বেঁচে থাকাকে যে উদ্‌যাপন করা যায়, চারপাশের ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট সৌন্দর্য আর সম্পর্কের যে মহত্ত্ব, তা শিখেছি তো এই জাদুকরের কাছেই। এই যে জীবনে খুব অল্প চাওয়া, অল্পতে আনন্দ খুঁজে পাওয়া, সহজ-সরল জীবনযাপনের আগ্রহের মূলে হয়তো আছে তাঁর লেখা থেকে প্রাপ্ত অনুপ্রেরণা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.