রাজবাড়ীতে জেলা বিএনপির পদযাত্রায় দলটির বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদযাত্রা শুরু হওয়ার আগেই উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি হামলা চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ। জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী ও সদস্যসচিব কামরুল আলম হারুন অর রশিদের সমর্থক। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচিকে সামনে রেখে গতকাল সোমবার বিকেলে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উভয় পক্ষ একসঙ্গে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
কর্মসূচি পালন উপলক্ষে আজ সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা শহরের আজাদী ময়দানে সংগঠনের কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন। সেখানে সংগঠনের আহ্বায়ক, সদস্যসচিবসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির অপর পক্ষের কয়েক নেতা কার্যালয়ে উপস্থিত হন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পদযাত্রা শুরু হওয়ার আগেই উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের অনুসারীদের ধাওয়া দেওয়া হয়। ধাওয়া খেয়ে তাঁরা দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফসার আলী সরদারসহ কয়েকজন আহত হন।
কিছু সময় পর আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম তাঁর বাসভবন থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে কার্যালয়ের উদ্দেশে বের হন। কার্যালয়ের সামনে রেলগেট এলাকায় প্রধান সড়কে প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা তাঁদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। বাধা উপেক্ষা করে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম কার্যালয়ে উপস্থিত হন। এ সময় কার্যালয়ের কিছু আসবাব, মোটরবাইক ভাঙচুর করে অপর পক্ষের নেতা-কর্মীরা।
হামলায় উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশ উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। হামলায় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি মীর সৌরভ আহত হন। ডেইলি বাংলাদেশের প্রতিনিধি আবদুল হালিমের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
দুপুরে শহরের সজ্জনকান্দার বড়পুল এলাকায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। এ সময় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অপর দিকে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, ‘আমাদের সংগঠনে কোনো গ্রুপিং নেই। আজ দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদযাত্রা ছিল। আমাদের এক দফা। আমরা চাই মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে। দেশমাতা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে। কিন্তু আওয়ামী লীগের “কিছু এজেন্ট” আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালান। এতে শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
লিয়াকত আলী বলেন, ‘যারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার ছবি ভাঙচুর করে, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের ছবি ভাঙচুর করে, সংগঠনের লাইব্রেরি ভাঙচুর করে, তারা বিএনপির আদর্শ ধারণ করে না। পদযাত্রা শুরুর সময় কিছু সন্ত্রাসী ব্যাগের মধ্যে পাথর নিয়ে এসে দুই পাশে ছুড়তে ছুড়তে দলীয় কার্যালয়ে এসেছে। তবে সন্ত্রাসীরা কার্যালয়ে ১৫ মিনিটের বেশি সময় থাকতে পারে নাই।’
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক শেখ মোহাম্মদ আবদুল হান্নান বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে আহত ব্যক্তিদের অধিকাংশ মাথায় বা ঘাড়ে আঘাত পেয়েছেন। অনেকের মাথায় সেলাই দিতে হয়েছে। কেউ কেউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তাঁদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চলে গেছেন।