বগুড়ায় এক দফা দাবিতে পদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে।
পুলিশের গুলি ও হামলায় ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, বিএনপির হামলায় ছয় থেকে সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে নওয়াববাড়ি সড়কের রানার প্লাজার সামনে থেকে বিএনপির কার্যালয় পর্যন্ত।
বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার অভিযোগ করেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে বিএনপির মিছিলে হামলা ও গুলি করেছে। পরে তারা দলীয় কার্যালয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছুড়েছে। পুলিশের গুলি ও হামলায় ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
আলী আজগর তালুকদার বলেন, এক দফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রা ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পূর্বঘোষিত। আগেই কর্মসূচির রুট পরিকল্পনা পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল। কর্মসূচি ভন্ডুল করতে আওয়ামী লীগ শহরে শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি দেয়। আওয়ামী লীগের ইন্ধনে বিনা উসকানিতে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে ইয়াকুবিয়া মোড় থেকে সাতমাথা অতিক্রম করতে চেয়েছিল। সেখানে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ চলছিল। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ তাঁদের সাতমাথার দিকে না যেতে বলে। এতে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা করা হয়। পুলিশ ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। আত্মরক্ষার জন্য পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। দলীয় কার্যালয়ে হামলার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আজ বগুড়া জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে শহরের বনানী থেকে মাটিডালি পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সকালে মাটিডালি ও বনানী থেকে মিছিল নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয় অভিমুখে রওনা দেন। বিএনপির এ কর্মসূচির রোড ম্যাপ দলীয়ভাবে দুদিন আগে প্রচার করা হয় এবং পুলিশকেও জানানো হয়। কিন্তু একই দিন শহরের সাতমাথায় আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের ডাক দেয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপির শান্তি সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকেই শহরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সকাল ১০টার পর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টায় শহরের সাতমাথায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমবেত হন। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসানের নেতৃত্বে মিছিল করে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। সাতমাথা-থানা রোড ও বড়গোলা হয়ে দলীয় কার্যালয়ে ফিরে আসে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের মিছিল।
এদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা শহরের বনানী ও মাটিডালি থেকে পৃথকভাবে পদযাত্রা বের করেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বগুড়ার বনানী থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদারের নেতৃত্বে পদযাত্রা নিয়ে শহরের সাতমাথার দিকে এগোতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। বেলা পৌনে একটার দিকে ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে পৌঁছালে পদযাত্রায় অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা সাতমাথার দিকে এগোতে থাকেন। তখন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদের নেতৃত্বে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল, লাঠি নিক্ষেপ করেন। পুলিশও পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ছোড়ে। একপর্যায়ে লাঠিপেটা করে পুলিশ নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পরে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে সার্কিট হাউসের সামনে মারমুখী পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের তাড়া করে। এ সময় নেতা-কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। একপর্যায়ে নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া নেতা-কর্মীদের দিকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।