এই তো মাত্র এক মাস আগে, ১৫ জুন নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ব্ল্যাক মিরর-এর ষষ্ঠ মৌসুম। বিজ্ঞান কল্পকাহিনিনির্ভর সিরিজটির প্রথম পর্ব ছিল জোন ইজ অফল, যেখানে জোন নামের এক সাধারণ নারী হঠাৎ আবিষ্কার করেন, একটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত সিরিজে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত নিখুঁতভাবে দৃশ্যায়িত হচ্ছে। তিনি যা করছেন, তাই-ই হয়ে যাচ্ছে সিরিজটির দৃশ্য!
আর ওই নারীর চরিত্রে অভিনয় করছেন হলিউড অভিনেত্রী সালমা হায়েক। নিজের জীবনের খুঁটিনাটি, গোপন ও অন্তরঙ্গ বিবরণের সম্প্রচার ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন জোন।
একপর্যায়ে সালমা হায়েককে পর্যন্ত তাঁর মুখোমুখি দাঁড়াতে বাধ্য করেন সেই নারী। আর তখনই জানতে পারেন, তাঁর চরিত্রে সালমা অভিনয় করছেন না। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মটি সালমার মুখচ্ছবি কিনে নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহযোগিতায় চরিত্রটি নির্মাণ করিয়েছে।
এরপর কী হলো
জানতে পর্দা থেকে নজরটা একটু বাস্তবে সরাতে হবে। জোন ইজ অফল-এর এই পর্ব প্রচার হওয়ার ঠিক এক মাসের মাথায় লাইট ক্যামেরার দুনিয়া ফেলে রাস্তায় নেমে এসেছেন হলিউডের অভিনয়শিল্পীরা। শামিল হয়েছেন লেখকদের চলমান ধর্মঘটে। গেল ছয় দশকে এমন ধর্মঘট দেখেনি হলিউড। অভিনয়শিল্পীদের এই ধর্মঘটের সুরাহা না হলে থেমে যেতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনোদনযন্ত্রের চাকা।
আরও আগেই অবশ্য ধর্মঘটে যেতে চেয়েছিলেন অভিনয়শিল্পীরা। কিন্তু হলিউডের অভিনয়শিল্পীদের দুই সংগঠন দ্য স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড (স্যাগ) এবং আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টসের (আফট্রা) সঙ্গে স্টুডিওগুলোর চুক্তি থাকায় কাজটা তাঁরা করতে পারছিলেন না। ১২ জুলাই স্থানীয় সময় রাত ১২টায় শেষ হয় সেই চুক্তির মেয়াদ। এরপরই তাঁরা যুক্ত হন ‘রাইটারস গিল্ড অব আমেরিকা’র সঙ্গে, যাঁরা গত ২ মে থেকেই ধর্মঘটে রয়েছেন।
কেন এই ধর্মঘট
এক শ বছরের বেশি সময় ধরে রুপালি পর্দা আমাদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এতে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। বদলেছে রুপালি পর্দার আকার। মানুষের ঘরে ঢুকেছে ‘জাদুর বাক্স’—টেলিভিশন। দশকে দশকে এই টেলিভিশনেরও রূপ বদল হয়েছে। আর এখন তো মুঠোফোনের বদৌলতে প্রায় সবার হাতেই পৌঁছে গেছে একটি করে পর্দা, যা মানুষকে দিয়েছে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু দেখার সুবিধা। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়েই অডিও-ভিজ্যুয়াল বিনোদনে এসেছে নতুন মাধ্যম স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম।
স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো বিনোদন কনটেন্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তবে ধর্মঘটিরা বলছেন, কনটেন্ট বাড়লেও কমেছে অভিনয়শিল্পীদের আয়। বিষয়টি খোলাসা করা যাক। নেটওয়ার্ক টেলিভিশনের যুগে একজন অভিনয়শিল্পীর কাজ যতবার পর্দায় প্রচারিত হতো, প্রতিবারই তাঁরা সম্মানী পেতেন। অর্থাৎ অভিনয়শিল্পীরা যখন একটি চিত্রনাট্যে অভিনয় করতেন, তখন তো তাঁরা সম্মানী পেতেনই, উপরন্তু পরবর্তীকালে এই চিত্রনাট্য যতবার পুনঃপ্রচার তথা বাণিজ্যিক প্রদর্শন ঘটত, ততবারই তাঁরা পেতেন আংশিক সম্মানী।
কিন্তু স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম আসার পর আগের যুগের নেটওয়ার্ক টেলিভিশনের এই নিয়ম উল্টে গেল। কেননা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সার্ভারে একবার যুক্ত হয়ে গেলে অসংখ্যবার আপনি দেখতে পারেন একই কনটেন্ট। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো অভিনয়শিল্পীদের নেটওয়ার্ক টেলিভিশনের যুগের মতো কোনো ‘রেসিডুয়াল পে’ বা পুনঃপ্রদর্শন সম্মানী দেয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কমে গেছে অভিনয়শিল্পীদের আয়।
কিন্তু এসব ছাপিয়ে অভিনয়শিল্পীদের মনে নতুন শঙ্কা জাগিয়ে তুলেছে অভিনয়ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহার। অভিনয়শিল্পীদের বিকল্প কি হয়ে উঠবে এআই? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বর্তমানে সব কাজ থামিয়ে দিয়েছেন হলিউডের দেড় লাখের বেশি অভিনয়শিল্পী।