দেশে আরও ৫ জনের মৃত্যু। নতুন করে আক্রান্ত ১ হাজার ২৩৯ জন।
মা–মেয়ে দুজনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। চার দিন ধরে দুজনই রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তবে মেয়ের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালের অষ্টম তলার শিশু ওয়ার্ডে। আর মা হেনা বেগম রয়েছেন হাসপাতালের তৃতীয় তলার মহিলা ওয়ার্ডে। তিনি শারীরিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
সাত বছরের ইকরামুনি মায়ের কাছে যেতে চায়। কিন্তু হাতে ক্যানুলা (ইনজেকশন ও স্যালাইন বারবার দেওয়ার ব্যবস্থা) নিয়ে অসুস্থ শরীরে হাঁটাচলা করা তার জন্য কষ্টকর। অন্যদিকে মায়ের পক্ষেও শারীরিক এই অবস্থায় সিঁড়ি ভেঙে তৃতীয় তলা থেকে অষ্টম তলায় মেয়ের কাছে আসা সম্ভব নয়। হাসপাতালে রোগী ও তাঁদের স্বজনদের জন্য দুটি লিফট থাকলেও সারাক্ষণই ভিড় লেগে থাকে।
প্রথমে দুটো বা তিনটা দেওয়া (স্যালাইন) হয়। কিন্তু যে লোকটার ছয়টা স্যালাইন লাগবে, সেটা দিতে পারব না। কারণ, প্রতিদিন প্রায় ৮০০ ব্যাগ স্যালাইন দিতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বরাদ্দ আনলিমিটেড না। বরাদ্দের বিপরীতে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি
ইকরামুনির কান্না থামাতে বাবা ফোরকান হোসেন অনেকটা বাধ্য হয়ে তাকে কোলে নিয়ে গতকাল দুপুরে অষ্টম তলা থেকে তৃতীয় তলায় যান হেঁটে। এক হাতে তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, অন্য হাতে ছিল মেয়ের স্যালাইনের ব্যাগ।
হাসপাতালের আটতলার সিঁড়িতে গতকাল দুপুরে কথা হয় ফোরকান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মায়ের কাছে যেতে মেয়ে একটু পরপরই কাঁদতে থাকে। তাই মেয়েকে নিয়ে নিচে গিয়েছিলেন। কষ্ট হলেও দিনে এক-দুবার এভাবেই মেয়েকে নিয়ে তৃতীয় তলায় নামতে হয় তাঁর। মেয়ে যখন তার মাকে দেখে, তখন একটু ভালো থাকে।
ফোরকান হোসেন বলেন, স্ত্রী ও মেয়ের রক্তের প্লাটিলেট (অণুচক্রিকা) পরীক্ষা করিয়েছেন গত বুধবার। মেয়ের প্লাটিলেট ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার। আর স্ত্রীর প্লাটিলেট মাত্র ৭৪ হাজার। প্লাটিলেট আরও কমলে রক্ত দেওয়া লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
নিজে ও শাশুড়ি হোসনে আরা বেগম মিলে পালা করে স্ত্রী ও মেয়ের দেখভাল করছেন বলেও জানান ফোরকান।
গতকাল বেলা একটার দিকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অষ্টম তলার শিশু ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে অনেকে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগী (ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু) ও স্বজনদের ভিড়ে এই ওয়ার্ডের ভেতরে হাঁটাচলা করাও এখন দায়। ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দাতেও বেশ কিছু শয্যা পাতা হয়েছে। সেখানেও যাদের জায়গা হয়নি, তারা মেঝেতে ফোমের তোশক বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারটি তলায় এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে। তৃতীয় তলায় নারীরা, অষ্টম তলায় শিশুরা এবং দশম ও একাদশ তলায় রাখা হচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত পুরুষ রোগীদের। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত হিসাবে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮১। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশু রয়েছে ১২৩টি। বিপরীতে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা আছে মাত্র ৬০টি।
অনেক রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, হাসপাতাল থেকে স্যালাইন, ক্যানুলা, স্কচটেপ ও স্যালাইনের সঙ্গে যুক্ত নল দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা বলেন, ভর্তির সময়ই বলে দেওয়া হয়, হাসপাতাল থেকে শুধু একবার স্যালাইন দেওয়া হবে। এরপর যা স্যালাইন লাগবে, সেটা বাইরে থেকে কেনা লাগবে।
যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকার বাসিন্দা মো. ফরহাদ বলেন, তাঁর মেয়ে ফাতেমা (১০ মাস বয়সী) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে। ভর্তির সময় হাসপাতাল থেকে শুধু একবারই স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগের বিষয়ে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘প্রথমে দুটো বা তিনটা দেওয়া (স্যালাইন) হয়। কিন্তু যে লোকটার ছয়টা স্যালাইন লাগবে, সেটা দিতে পারব না। কারণ, প্রতিদিন প্রায় ৮০০ ব্যাগ স্যালাইন দিতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বরাদ্দ আনলিমিটেড না। বরাদ্দের বিপরীতে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।’
আরও ১২৩৯ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ৫
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ১ হাজার ২৩৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৯৩ জন। এর মধ্যে চলতি জুলাই মাসের ১৩ দিনেই মারা গেছেন ৪৬ জন।