বানৌজা ‘শের-ই-বাংলা’ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটি। এ ঘাঁটি উদ্বোধনের মাধ্যমে নৌবাহিনী কয়েক ধাপ এগিয়ে গেল বলে মনে করছেন এ বাহিনীর কর্মকর্তারা। এখান থেকেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ ঘাঁটি। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৭০০ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে এটি। ইতোমধ্যে ৩০০ একর জমিতে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি অংশে উন্নয়ন কাজ চলছে।
এই ঘাঁটিটি প্রধানত নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণে ব্যবহার হবে। খুলনা তিতুমীর ঘাঁটিতে এতদিন যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হতো, এখন থেকে তা এখানেই হবে। বছরে ১ হাজার ৬০০ সৈনিককে এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
গত বুধবার ঘাঁটিটি সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কলাপাড়া থেকে একটি সড়ক ঘাঁটিতে প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে আন্ধারমানিক নদী দিয়ে ঘাঁটিতে আসার বিকল্প পথও রয়েছে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঠিক বিপরীত পাশে অবস্থিত ঘাঁটিটি। কলাপাড়ায় নবনির্মিত নৌঘাঁটি ও দুই ধরনের আটটি জাহাজ গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের (ভিটিসি) মাধ্যমে কমিশনিং করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঘাঁটির অধিনায়ক কমডোর এম মহব্বত আলীর হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। নৌঘাঁটি ঘুরে দেখা যায়, প্রধান গেট থেকে একটি সড়ক আন্ধারমানিক নদী পর্যন্ত চলে গেছে। এ ঘাঁটিতে প্রবেশ করতেই বাঁ পাশে মসজিদ, তার পেছনে লেকের পাশে স্কুল-কলেজ, খেলার মাঠ, নাবিক কোয়ার্টার্স ও জেসিও কোয়ার্টার্স। এর পর প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার্ড রুম, অফিসার্স অ্যাভিনিউ, কমান্ডার রাবনাবাদ অফিস, সোয়াডস ভবন, হাইড্রোগ্রাফিক ও ওশানোগ্রাফিক সেন্টার। আর ডান পাশের প্রথম শেডে ফায়ার ব্রিগেড অফিস, প্যারেড গ্রাউন্ড, নেটস অ্যাডমিন মাল্টিপারপাস শেড ও সুইমিংপুল। পরের শেডে এমইএস অফিস, নাবিকদের ব্যারাক নেটওয়ার্ক, নেটস একাডেমি ভবন ও ওয়ার্কশপ।
সমুদ্র তলদেশ থেকে তেল-গ্যাস উত্তোলন, মৎস্য সম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটন– এই চার খাত থেকে হাজারো কোটি টাকা আয় করতে পারবে বাংলাদেশ। আহরিত সম্পদ ও পয়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তাসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চোরাচালান কিংবা জলদস্যুতা বন্ধে ভূমিকা রাখবে নৌবাহিনীর এ ঘাঁটি। এ ঘাঁটি কমিশনিংয়ের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ডে নৌবাহিনীর নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত চারটি পেট্রল ক্রাফট ও চারটি জাহাজ যুক্ত হলো নৌবহরে। ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি (এলসিইউ) বানৌজা ডলফিন, তিমি, টুনা ও পেঙ্গুইনের যুদ্ধ কিংবা জরুরি মুহূর্তে সরঞ্জাম পরিবহনের মূল দায়িত্ব থাকলেও বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ভাসানচার, রোহিঙ্গাদের ত্রাণসামগ্রী আনা-নেওয়ার কাজ করছে। আর পেট্রল ক্রাফট স্কোয়াড্রন বানৌজা শহীদ দৌলত, শহীদ ফরিদ, শহীদ মহিবুল্লাহ ও শহীদ আখতার উদ্দিন উপকূলীয় এলাকায় নিরাপত্তা টহলসহ অপারেশনাল কার্যক্রমে মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর বানৌজা ‘শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটির নামফলক উন্মোচন করেন। পরে ২০১৭ সালে ঘাঁটির কাজ শুরু হয়। পুরো কাজ শেষ হতে আরও কয়েক বছর লাগবে বলে জানিয়েছেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা। দেশের সর্ববৃহৎ এই নৌঘাঁটিতে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসহ গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে অপারেশনাল কার্যক্রমের সুবিধার্থে বিভিন্ন দপ্তর ও অফিস স্থাপনও করা হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব প্রযুক্তিতে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে ক্রেতা থেকে নির্মাতায় পরিণত হয়েছে নৌবাহিনী। বিশ্বমানের নৌবাহিনী হতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।