ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট। রাজধানীর আবদুল্লাহপুর মোড়ে পুলিশের তল্লাশিচৌকি। সড়কের পাশে ও সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন ছয় থেকে সাতজন পুলিশ সদস্য। কোনো মোটরসাইকেল বা ব্যক্তিগত যানবাহন আসতে দেখলেই দূর থেকে হাতের ইশারায় থামতে বলছেন। গাড়ি থামাতেই শুরু করছেন তল্লাশি।
এরই মধ্যে একটি মোটরসাইকেল এসে থামল তল্লাশিচৌকির সামনে। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ছেড়ে আসা মোটরসাইকেলটি যাবে ঢাকার মিরপুরে। মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া আর একজন যাত্রী। তাঁদের পথ আটকে শুরু হয় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ। ‘নাম কী, যাবেন কোথায়, ব্যাগে কী, পরিচয়পত্র আছে কি না’ ইত্যাদি প্রশ্ন করতে থাকেন তাঁরা। একপর্যায়ে ভয়ে সব ফেলে মাঝসড়কে দৌড় দেন ওই যাত্রী। তাঁকে ধরতে পুলিশও পিছু নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত না পেয়ে মোটরসাইকেলচালককে আটক করেছে পুলিশ।
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুর ১২টার পর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। তল্লাশির সময় কারও কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলে কাউকে কাউকে পুলিশের আটক করতে দেখা গেছে।
আটকের পর সড়কের পাশে পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে কথা হয় নাঈম শেখ নামের ওই মোটরসাইকেলচালকের সঙ্গে। নাঈম জানান, তিনি পেশায় একজন ‘পাঠাও’ চালক। পেছনে থাকা ওই যাত্রীকে নিয়ে টঙ্গীর স্টেশন রোড থেকে ঢাকার মিরপুরে যাচ্ছিলেন। পথে পুলিশ গতিরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে যাত্রী ভয় পেয়ে যান। একপর্যায়ে দৌড়ে পালিয়ে যান তিনি। এরপর সেই অপরাধে তাঁকে আটক করেছে পুলিশ।
নাঈম শেখ বলেন, ‘আমি ওই যাত্রীকে আগে থেকে চিনি না। আমাকে মিরপুর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ভাড়া করছিল। কিন্তু হঠাৎ পুলিশ গাড়ি থামালে ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাঁকে ধরতে না পেরে আমাকেই ধরে নিয়ে আসে।’
তবে পুলিশ বলছে, মোটরসাইকেলচালক নাঈম ও ওই যাত্রীর কথাবার্তা সন্দেহজনক ছিল। এর মধ্যে বাইকের পেছনে থাকা ব্যক্তি হঠাৎ দৌড়ে পালিয়ে যান। যেহেতু বিষয়টি সন্দেহজনক, তাই চালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খালেদ বলেন, ‘তল্লাশির সময় পেছনে থাকা যাত্রী আমাদের দেখে পকেট থেকে কিছু একটা ফেলে দৌড় দেয়। এটা সন্দেহজনক। তাই ওই ব্যক্তিকে ধরার জন্য চালককে আটক করা হয়েছে।’
আবদুল্লাহপুর মোড় রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক এসে এখানে যুক্ত হয়েছে। এ দুই সড়ক দিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৪ জেলা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ রাজশাহী বিভাগের মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেন। মোড়টিতে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান করে পুলিশের এমন তল্লাশি কার্যক্রম দেখা গেছে। দুদিক থেকে কোনো মোটরসাইকেল বা ব্যক্তিগত গাড়ি আসতে দেখলে তাঁরা গতিরোধ করে তল্লাশি করছিলেন। এর মধ্যে কোনো পথচারীর হাতে বড় ব্যাগ দেখলে তাঁকেও তল্লাশি করছিল পুলিশ।
তল্লাশির ব্যাপারে এসআই মো. খালেদ বলেন, ‘এটা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা সব সময়ই এ রকম তল্লাশি কার্যক্রম চালাই। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই।’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ এক সদস্য বলেন, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে তাঁদের ওপর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সেই সূত্র ধরেই তাঁরা সড়কে অবস্থান করছেন। যানবাহন তল্লাশিসহ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।