ভারতের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক দলকে। সেই লক্ষ্যে শিগগিরই ভারতে আসছে বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল।
বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, চলতি মাসের শেষে অথবা আগস্টের গোড়ায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা দিল্লি আসবেন।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঠিক করা হয়েছে। তাঁরা বিজেপির আমন্ত্রণে দিল্লি সফরে আসছেন। তবে সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
কৃষিমন্ত্রী নিজেও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাঁর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল বিজেপির আমন্ত্রণে দিল্লি যাচ্ছে। শিগগিরই সফরের সময়সূচি চূড়ান্ত হবে।
আওয়ামী লীগের মতোই বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে দিল্লি আসছে কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওইস্ট সেন্টার), যার চেয়ারম্যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল।
চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন। এর আগে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের এই সফর ঘিরে অন্যরকম কৌতূহল ও আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিজেপি সূত্রের দাবি, দলীয় সম্পর্ক স্থাপনের এই উদ্যোগের সঙ্গে নির্বাচনী রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।
কয়েক বছর ধরেই বিজেপি দলীয় স্তরে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জে ডি নাড্ডা দলের সভাপতি হওয়ার পর ইতিমধ্যেই তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের দলীয় দপ্তরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রাজনৈতিক আলোচনার মধ্য দিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া মজবুত করতে সচেষ্ট হয়েছেন।
নাড্ডা এই উদ্যোগের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, বিজেপির সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নীতি এবং জাতীয়তাবাদ নিয়ে অনেকের মধ্যে ভিন্ন ধারণা আছে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রবাদ সম্পর্কে বিজেপি ঠিক কী ভাবে, সেটা বিদেশিদের কাছে ব্যাখ্যা করা ও তার মধ্য দিয়ে সম্পর্ক দৃঢ় করতেই এই উদ্যোগ।
বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, জি–২০ সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া উদ্যোগের পাশাপাশি দলীয় স্তরেও কিছু প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপচারিতা তারই অংশ।
গত বুধবার বিজেপি সভাপতির সঙ্গে দেখা করেছিলেন ভারতে নিযুক্ত পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের রাষ্ট্রদূতেরা। দীনদয়াল মার্গে বিজেপির সদর দপ্তরে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা নানা বিষয়ে কৌতূহল দেখান।
বিজেপি সূত্রের খবর, অনেকে জানতে চান কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বিজেপি কোথায় আলাদা। এত দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার কারণ কী। বিপুল জনসমর্থনের রহস্য কোথায়? দেশের মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমকে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা জানতেও তাঁরা আগ্রহ দেখান। বিজেপি নেতারা তাঁদের দলের আদর্শ ও নীতি ব্যাখ্যা করেন। কীভাবে নিচু স্তর পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করে দল এগোয়, তা জানান।
বিজেপি সূত্র বলছে, বিজেপি সম্পর্কে অনেকের মনে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। এ ধরনের আলাপচারিতা তা দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায়।
চলতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সদস্যভুক্ত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনের আয়োজন করেছে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)। বিজেপি সেই সম্মেলনে যোগ দেবে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
আওয়ামী লীগ, এএনসি কিংবা নেপালের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ঘনিষ্ঠও। এই ঘনিষ্ঠতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও আছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব, এএনসি কিংবা নেপালের রাজনীতিকেরা সেই বিশেষ সম্পর্কের কথা বারবার স্বীকার করেছেন।
বিজেপি চায়, তাদের সঙ্গে সম্পর্কও সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে। সে ক্ষেত্রে কিছু আড়স্টতার কথা স্বীকার করলেও বিজেপি নেতারা বিদেশিদের বোঝাতে চান, অভ্যন্তরীণ কোনো নীতির বিরূপ প্রতিফলন যাতে বিদেশে না পড়ে, সে জন্য তাঁরা সচেষ্ট। তাঁরা বোঝাতে চান, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে বৈদেশিক নীতি সামঞ্জস্যহীন।
সম্প্রতি ভারত সফরের সময় নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল বিজেপি দপ্তরে যান। বিজেপি নেতারা চীন সফরের সময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন। বিজেপির সভাপতি হওয়ার পর জে ডি নাড্ডা ইতিমধ্যেই ৬৮টি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। বিদেশিদের জন্য ‘বিজেপিকে জানুন’ কর্মসূচি তাঁরই তৈরি।