দূরত্ব ৩০০ মিটারের, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দামের ব্যবধান ২০০

0
137
কাঁচামরিচ

নওগাঁ পৌর কাঁচামাল পাইকারি বাজারে আজ শনিবার সকালে কৃষক এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছেন ২০০ থেকে ২২০ টাকা করে। সেখান থেকে ৩০০ মিটার দূরে শহরের গোস্তহাটির মোড় এলাকায় পৌর খুচরা কাঁচাবাজার। সেই বাজারে এই কাঁচা মরিচ ভোক্তারা কিনেছেন ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। একই চিত্র দেখা গেছে শহরের মুক্তির মোড় ও তাজের মোড় কাঁচাবাজারেও।

সকাল থেকে নওগাঁর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে বিক্রি হওয়া প্রায় সব ধরনের সবজি এক হাত বদলের পর খুচরা বাজারে দেড় থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়েছে। দুই থেকে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের পাশাপাশি প্রায় সব ধরনের সবজির বাজার তেতে ওঠায় হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ বাজার করতে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন।

আজ সকালে পৌর কাঁচামাল পাইকারি বাজারে মরিচ বিক্রি করতে আসা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের দুই সপ্তাহ আগ থেকে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে নিম্নাঞ্চলের মরিচের খেতগুলোয় পানি জমে গাছ নষ্ট হয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় হঠাৎ মরিচের দাম বেড়ে যায়। আজ পাইকারিতে প্রতি কেজি মরিচ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা করে। দুই সপ্তাহ আগে পাইকারিতে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১২০ কেজি দরে। মরিচের পাশাপাশি বেড়েছে ঢ্যাঁড়স, করলা, পটোল, বেগুন, কাঁকরোলসহ বিভিন্ন সবজির দাম।

নওগাঁয় পাইকারি বাজারে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। আজ শনিবার সকালে নওগাঁ পৌর কাঁচামাল পাইকারি বাজারে

পৌর পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে কাঁচা মরিচসহ সব সবজির সরবরাহ কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম পাইকারিতে দ্বিগুণ বেড়েছে। আজকে কাঁচা মরিচ কৃষকদের কাছ থেকে ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে কিনছেন। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তা বিক্রি করছেন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে।

পৌর কাঁচামাল পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি করছি। খুচরা বাজারে গিয়ে এই মরিচের দাম কীভাবে ৪০০ টাকা কেজি হয়, এটা আমার মাথায় আসে না। খুব জোর ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা হতে পারে। ৪০০ টাকা কেজি কোনোভাবেই হতে পারে না। মরিচের দাম বাড়ার পেছনে আড়তদার কিংবা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কোনো কারসাজি নেই।’

৩০০ মিটার দূরে পৌর কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করছেন ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। আজ প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা ও বেগুন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা গত দুই সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি।

পৌর কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা মাসুদ রানা দাবি করেন, আজ ৪০০ টাকা কেজি দরে যে মরিচ তিনি বিক্রি করছেন, সেই মরিচ তাঁর গতকাল শুক্রবার কেনা। গতকাল তিনি পাইকারিতে মরিচ কিনেছেন ৩২০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও এর মধ্যে কিছু মরিচ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি ৪০০ টাকা করে কেজি দরে বিক্রি করছেন। কাঁচামাল পাইকারিতে যে দামে কেনা হয়, খুচরাতে সাধারণত ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভে তাঁরা বিক্রি করে থাকেন।

মরিচের আকাশচুম্বী দামে বিক্রেতাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। সকাল নয়টার দিকে পৌর কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এক পোয়া কাঁচা মরিচ কিনলাম ১০০ টাকায়। বৃষ্টির কারণে গাছ নষ্ট হওয়ার অজুহাতে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তো এখনো তৈরি হয়নি যে বাজারে মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ঠিক আছে। তারপরও ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য সবজির দামও বাড়তি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.