উখিয়ায় আশ্রয়শিবিরে গোলাগুলিতে নিহত ৫ জনই আরসার সদস্য: দাবি এপিবিএনের

0
135
উখিয়ার একটি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পাঁচজনই মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য। নিহত পাঁচজনের একজন আরসা কমান্ডার, একজন জিম্মাদার ও বাকি ব্যক্তিরা সাধারণ সদস্য। আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করেছেন।

আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) বি-১৫, বি-১৬ ও বি-১৭ ব্লক এলাকায় আরসার সঙ্গে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তিনজন এবং উখিয়া আশ্রয়শিবিরের আইওএম হাসপাতালে নেওয়ার পর অপর দুজন মারা যান।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ) এইচ-৪৯ ব্লকের বাসিন্দা আনোয়ার ছাদেক (২২), একই আশ্রয়শিবিরের এ-২১ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ হামিম (২১), বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১০) এইচ-৪২ ব্লকের বাসিন্দা মো. নজিবুল্লাহ (৩২), মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৩) বি-১৭ ব্লকের বাসিন্দা নুরুল আমিন (২২) ও অজ্ঞাতনামা ২৫ বছর বয়সী আরেকজন রোহিঙ্গা।

নিহত পাঁচজনই আরসার সদস্য দাবি করে ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত তিনজনের একজন আনোয়ার ছাদেক ছিলেন বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) এইচ-৪৯ ব্লকের প্রধান জিম্মাদার। নিহত নজিবুল্লাহ ছিলেন বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১০) আরসার ক্যাম্প কমান্ডার। আর নিহত নুরুল আমিন ছিলেন মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৩) বি-১৭ ব্লকের আরসার সক্রিয় সদস্য। নিহত অপর দুজন আরসা সদস্য বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে আরও অনুসন্ধান চলছে।

আরসার সঙ্গে আরএসও-এর বিরোধ দীর্ঘদিনের উল্লেখ করে মো. ফারুক আহমেদ বলেন, আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্বশত্রুতার জেরে দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে এপিবিএন একটি ওয়ান শুটারগান ও একটি গুলি উদ্ধার করেছে। পাঁচজন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্যাম্প এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালানো হচ্ছে।

গোলাগুলিতে একসঙ্গে পাঁচজন আরসা সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় আশ্রয়শিবিরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২) অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গার বসতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী বাহিনীর প্রধান নবী হোসেন। আরসাকে ঠেকাতে বছরখানেক আগে নবী হোসেনের সঙ্গে হাত মেলায় আরএসও। ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিতে নবী হোসেন বাহিনী ও আরএসও সমর্থক রোহিঙ্গা মাঝিদের অপহরণের পর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে আরসা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ভোর পাঁচটার দিকে আরসার ২০-২২ জন সন্ত্রাসী বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) এইচ ব্লকের রোহিঙ্গা বসতিতে ঢুকে কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝিকে (নেতা) খুঁজতে থাকেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের মধ্যে হইচই শুরু হয়। খবর পেয়ে আরএসও-এর ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আরসা সদস্যদের ঘিরে ফেললে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা আশ্রয়শিবিরের বি-১৫, বি-১৬ ও বি-১৭ ব্লক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

রোহিঙ্গা সূত্রে জানা যায়, গুলিতে নিহত আনোয়ার ছাদেক বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) এইচ-৪৯ ব্লকের প্রধান জিম্মাদার ছিলেন। ইয়াবা বিক্রির টাকা, চাঁদাবাজির টাকা, অস্ত্র–গোলাবারুদসহ লুণ্ঠিত মালামাল রক্ষিত থাকে আনোয়ারের হাতে। তাঁর নির্দেশে রোহিঙ্গা মাঝিদের অপহরণের পর টাকা আদায়, হত্যা ও হত্যার পরিকল্পনা হয়। দুই বছর আগে ক্যাম্প-৮ থেকে নবী হোসেন বাহিনীর হাতে বিতাড়িত হয়ে নিহত নজিবুল্লাহ আশ্রয় নিয়েছিলেন পাশের বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১০)। কয়েক মাস আগে নজিবুল্লাহকে আরসার ক্যাম্প-১০–এর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর অত্যাচার-নির্যাতনে ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা অতিষ্ঠ ছিলেন।

বালুখালী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা আবদুর রহিম বলেন, আরএসও-এর সঙ্গে গোলাগুলিতে আরসার পাঁচ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা চরম আতঙ্কে ভুগছেন। প্রতিশোধ নিতে আরসা যেকোনো সময় হামলা চালাতে পারে। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরের সব কটিতে আরসার শক্ত অবস্থান রয়েছে। রয়েছে ভারী অস্ত্রশস্ত্রও।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। অপর ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১৬ জন আরসার সদস্য, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্য ব্যক্তিরা সাধারণ রোহিঙ্গা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.