‘মোদি’ পদবি নিয়ে মন্তব্যের জেরে মামলায় স্বস্তি নেই ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর।
গুজরাটের সুরাটের নিম্ন আদালত এই মামলায় রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছিলেন। নিম্ন আদালতের এই রায় আজ শুক্রবার বহাল রেখেছেন গুজরাট হাইকোর্ট।
নিম্ন আদালতের রায় স্থগিত রাখার জন্য গুজরাট হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন রাহুল। নিম্ন আদালতের রায় গুজরাট হাইকোর্ট স্থগিত করলে রাহুল তাঁর লোকসভার সদস্যপদ ফিরে পেতেন। কিন্তু তা না হওয়ায় রাহুলকে এখন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে।
গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছকের বেঞ্চে গত মে মাসে এই মামলার শুনানি শেষ হয়। শুনানিতে রাহুলের আইনজীবীরা অন্তর্বর্তী রায়ের আরজি জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিচারপতি তা অগ্রাহ্য করেন।
বিচারপতি প্রচ্ছক তখন বলেছিলেন, গ্রীষ্মকালীন অবকাশের পর হাইকোর্ট খুললে এই মামলার রায় দেবেন তিনি।
এক মাসের অবকাশকালীন ছুটি শেষ হাইকোর্ট খুললে আজ রায় দেন বিচারপতি প্রচ্ছক। তিনি বলেন, এই রায় রাহুলের প্রতি অবিচার নয়। নিম্ন আদালতের রায় স্থগিত রাখার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। নিম্ন আদালতের রায় যথার্থ ও আইনগত দিক থেকে ন্যায্য। রাজনীতি হওয়া উচিত স্বচ্ছ ও অমলিন।
রাহুলের বিরুদ্ধে এমন আরও অন্তত ১০টি মামলা বিভিন্ন আদালতে রয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেন বিচারপতি প্রচ্ছক।
গুজরাট হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানাতে একটুও সময় নেয়নি বিজেপি। দলটির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা টুইট করে লিখেছেন, ‘সত্যমেব জয়তে’। অর্থাৎ সত্যেরই জয় হয়।
শেহজাদ পুনাওয়ালা আরও লিখেছেন, এবার হাইকোর্টও রাহুল গান্ধীর আবেদন খারিজ করে দিলেন। রায়ে বিচারপতি কঠোর মন্তব্যও করেছেন। রাহুল ধারাবাহিকভাবে অন্যায় করে চলছেন। অনগ্রসর সমাজের কাছে ক্ষমা না চেয়ে তিনি নির্লজ্জভাবে একই কথা বলে চলছেন।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাহুল এবার সুপ্রিম কোর্টে যাবেন।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকে এক জনসভায় ‘মোদি’ পদবি নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন রাহুল। অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দেশত্যাগী নীরব মোদি, ললিত মোদিদের নাম উচ্চারণ করে রাহুল জানতে চেয়েছিলেন, সব চোরের পদবি কেন মোদি হয়?
সে সময় রাফাল যুদ্ধবিমান কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কংগ্রেস স্লোগান দিয়েছিল, ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’।
কর্ণাটকে রাহুলের মন্তব্যের জেরে গুজরাটের বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদি সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানহানির মামলা করেন।
মামলার চার বছরের মাথায় গত ২৩ মার্চ রায় ঘোষণা করেন সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। রায়ে রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের জেল ও জরিমানার সাজা শোনানো হয়।
রায়ের বিরুদ্ধে সুরাটের অতিরিক্ত দায়রা আদালতে আবেদন করেছিলেন রাহুল। তাঁর সাজা স্থগিতের আবেদন গত ২০ এপ্রিল খারিজ করে দেন অতিরিক্ত দায়রা আদালত। তিনি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় বহাল রাখেন। এবার হাইকোর্টেও এই রায় বহাল রইল।
ভারতীয় আইন অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য বা বিধায়কের কোনো ফৌজদারি মামলায় দুই বা ততধিক বছরের সাজা হলে তাঁর সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়। যত বছরের সাজা, তার সঙ্গে আরও ছয় বছর তিনি ভোটে দাঁড়ানোর জন্য অনুপযুক্ত বিবেচিত হবেন।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের পরপরই রাহুলের লোকসভার সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়। সংসদ সদস্য হিসেবে পাওয়া সরকারি বাসভবনও তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়।
রাহুল ছিলেন কেরালার ওয়েনাড আসনের লোকসভার সদস্য। তাঁর সদস্যপদ খারিজের সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেছে। তবে নির্বাচন কমিশন এখনো আসনটিতে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেনি।